আইবিএ পড়ে কি হওয়া যায়

বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে, তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) সবচেয়ে সম্মানজনক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি। এটি ব্যবসায় প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে দক্ষতা অর্জনের জন্য আদর্শ স্থান। অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক জানতে চান, “আইবিএ পড়ে কি হওয়া যায়?” এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই আমরা আলোচনা আইবিএ পড়ে কি হওয়া যায় এই বিষয় নিয়ে।

আইবিএ কী?

আইবিএ কী? আইবিএ হলো ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট, যা কোনো নির্দিষ্ট বিষয় নয়। এখানে বিবিএ পড়ানো হয়, যেখানে বিভিন্ন মেজর বেছে নেওয়ার সুযোগ থাকে। বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় প্রফেসররা এখানে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করেন।

আইবিএ থেকে পড়াশোনা শেষ করার পর চাকরির সুযোগ অনেক, যা তালিকা করে শেষ করা যাবে না। তবে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে কাজ করেন। তবে চাকরি পেতে হলে দক্ষতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যেখান থেকেই পড়ুন, যদি দক্ষ না হন, শুধু প্রতিষ্ঠান দেখে কেউ চাকরি দেবে না।

বাংলাদেশে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইবিএ রয়েছে—ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। আরও বিস্তারিত জানতে গুগলে অনুসন্ধান করতে পারেন। এছাড়া, আইবিএ গ্র্যাজুয়েটরা কী ধরনের চাকরি করেন, তা লিংকডইনে সার্চ করলেই জানতে পারবেন।

আইবিএ পড়ে কী হওয়া যায়?

আইবিএ থেকে পড়াশোনা শেষ করার পর একজন পেশাদার বিভিন্ন ক্যারিয়ারের সুযোগ পেতে পারেন। এখানে আইবিএ পড়ে কি হওয়া যায় তার একটা তালিকা দেওয়া হলো:

১. কর্পোরেট ম্যানেজার

আইবিএ থেকে বিবিএ বা এমবিএ শেষ করার পর কর্পোরেট ম্যানেজার হওয়ার সুযোগ থাকে। দেশ-বিদেশের বড় কোম্পানিগুলো আইবিএ গ্র্যাজুয়েটদের বিভিন্ন ম্যানেজমেন্ট পদে নিয়োগ দেয়। নেতৃত্ব, সমস্যা সমাধান ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের দক্ষতা থাকলে এই পজিশনে ভালো ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব।

২. ব্যাংক ও ফাইন্যান্স এক্সপার্ট

আইবিএ গ্র্যাজুয়েটদের জন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিশাল কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। গ্র্যাজুয়েটরা বিনিয়োগ ব্যাংকিং, ফাইন্যান্স ম্যানেজমেন্ট বা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টে ক্যারিয়ার গড়তে পারেন। এখানে কাজ করার জন্য আর্থিক বিশ্লেষণ, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও বাজার গবেষণার দক্ষতা প্রয়োজন। ব্যাংকিং খাতে আইবিএ গ্র্যাজুয়েটরা নানা পদে যেমন আর্থিক পরামর্শদাতা, ঝুঁকি ব্যবস্থাপক ও বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করতে পারেন। এই সেক্টরে ভালো পেশাদার দক্ষতা থাকলে উচ্চপদে উন্নতি পাওয়া সম্ভব।

৩. মানবসম্পদ ব্যবস্থাপক (HR Manager)

এইচআর ম্যানেজমেন্ট (Human Resource Management) বর্তমান সময়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাত। একটি প্রতিষ্ঠানের সফল মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনার জন্য দক্ষ এইচআর ম্যানেজারদের চাহিদা সবসময়ই থাকে। আইবিএ গ্র্যাজুয়েটরা এই খাতে কর্মরত থেকে নিয়োগ, প্রশিক্ষণ, কর্মী উন্নয়ন ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করতে পারেন। একটি প্রতিষ্ঠানে সঠিক মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠার জন্য আইবিএ গ্র্যাজুয়েটদের নেতৃত্বের দক্ষতা, যোগাযোগ এবং সমস্যা সমাধানের দক্ষতা গুরুত্বপূর্ণ। এই পেশায় ভালো ক্যারিয়ার গড়ার জন্য মানবসম্পদ নীতি ও কর্মীদের ভালোবাসার ক্ষমতা অত্যন্ত জরুরি।

৪. মার্কেটিং এক্সপার্ট ও ব্র্যান্ড ম্যানেজার

মার্কেটিং এক্সপার্ট ও ব্র্যান্ড ম্যানেজার হিসেবে কাজ করার জন্য আইবিএ গ্র্যাজুয়েটদের চাহিদা রয়েছে বিভিন্ন কোম্পানি, বিশেষ করে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে। তাদের মূল দায়িত্ব হলো কোম্পানির পণ্য ও সেবা বাজারজাত করা, ব্র্যান্ডের পরিচিতি বৃদ্ধি করা এবং তার মূল্য বৃদ্ধিতে সহায়তা করা। এছাড়া, মার্কেট ট্রেন্ড, গ্রাহকের চাহিদা বিশ্লেষণ এবং কৌশলগত পরিকল্পনা তৈরি করে কোম্পানির বিক্রয় ও ব্র্যান্ড শক্তি বৃদ্ধি করার জন্য তারা অবদান রাখেন। এটি একটি চ্যালেঞ্জিং এবং পুরস্কৃত ক্যারিয়ার অপশন।

৫. উদ্যোক্তা (Entrepreneur)

আইবিএ থেকে পড়াশোনা শেষ করে শুধু চাকরির বাজারেই নয়, একজন সফল উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগও রয়েছে। এখানে অর্জিত ব্যবসায়িক জ্ঞান, নেতৃত্বের দক্ষতা ও বিশ্লেষণী ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে অনেক গ্র্যাজুয়েট নিজস্ব ব্যবসা শুরু করেন। সঠিক পরিকল্পনা, বাজার বিশ্লেষণ ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার দক্ষতা থাকলে উদ্যোক্তা হিসেবে সফল হওয়া সম্ভব। অনেক আইবিএ গ্র্যাজুয়েট স্টার্টআপ তৈরি করে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন।

৬. কনসালট্যান্ট ও এনালিস্ট

আইবিএ গ্র্যাজুয়েটদের জন্য কনসালট্যান্ট ও বিজনেস অ্যানালিস্ট হিসেবে কাজ করার ভালো সুযোগ রয়েছে। বড় প্রতিষ্ঠানগুলো স্ট্র্যাটেজিক সিদ্ধান্ত নিতে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেয়, যেখানে আইবিএ গ্র্যাজুয়েটদের চাহিদা বেশি। ব্যবসার সমস্যা চিহ্নিত করা, ডাটা বিশ্লেষণ ও কার্যকর সমাধান দেওয়ার দক্ষতা থাকলে এই পেশায় ভালো ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব। কনসালটিং ফার্ম, কর্পোরেট কোম্পানি ও স্টার্টআপগুলোতে এ ধরনের পজিশনে চাকরির সুযোগ থাকে।

৭. পাবলিক সেক্টরে ক্যারিয়ার

আইবিএ গ্র্যাজুয়েটদের জন্য শুধু কর্পোরেট জগতে নয়, সরকারি ও উন্নয়ন সংস্থাগুলোতেও ভালো ক্যারিয়ারের সুযোগ রয়েছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও নীতি-নির্ধারণী সংস্থায় আইবিএ গ্র্যাজুয়েটরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। অনেকেই বিসিএস ক্যাডার হিসেবে প্রশাসন, বাণিজ্য বা অর্থ মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া, উন্নয়ন সংস্থাগুলোতে নীতি বিশ্লেষক, প্রকল্প ব্যবস্থাপক ও কনসালট্যান্ট হিসেবে কাজের সুযোগ থাকে। নেতৃত্বের দক্ষতা ও নীতিগত বিশ্লেষণের সক্ষমতা থাকলে পাবলিক সেক্টরে সফল ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব।

৮. বহুজাতিক সংস্থায় (MNC) চাকরি

বাংলাদেশে ও বিদেশে থাকা বহুজাতিক সংস্থাগুলোতে (MNC) আইবিএ গ্র্যাজুয়েটদের জন্য দারুণ সুযোগ রয়েছে। গুগল, মাইক্রোসফট, ইউনিলিভার, পেপসিকো, নেস্টলেসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নিয়মিতভাবে আইবিএ থেকে নিয়োগ দিয়ে থাকে।

আইবিএ পড়ার সুবিধা

আইবিএ পড়ার বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে, যেমন:

উচ্চ বেতনের চাকরির সুযোগ:- আইবিএ গ্র্যাজুয়েটদের জন্য কর্পোরেট জগতে উচ্চ বেতনের চাকরির সুযোগ থাকে।

নেটওয়ার্কিং সুবিধা: আইবিএ পড়লে দেশে ও বিদেশে প্রতিষ্ঠিত প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে পেশাগত নেটওয়ার্ক তৈরি করা যায়।

বিশ্বমানের শিক্ষা: এখানে আন্তর্জাতিক মানের পাঠ্যক্রম এবং অভিজ্ঞ শিক্ষক দ্বারা শিক্ষাদান করা হয়।

প্রতিষ্ঠানের সুনাম: আইবিএ থেকে পাশ করলে চাকরির বাজারে একজন পেশাদার হিসেবে বাড়তি সুবিধা পাওয়া যায়।

শেষকথা,আইবিএ পড়া মানেই শুধু ডিগ্রি অর্জন করা নয়, বরং এটি একটি সম্ভাবনাময় ক্যারিয়ারের দুয়ার খুলে দেয়। কর্পোরেট দুনিয়া, ব্যাংকিং, মানবসম্পদ, মার্কেটিং, উদ্যোক্তা বা সরকারি খাতে আইবিএ গ্র্যাজুয়েটদের জন্য অসংখ্য সুযোগ রয়েছে। যারা ব্যবসায় প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনায় ক্যারিয়ার গড়তে চান, তাদের জন্য আইবিএ হতে পারে একটি আদর্শ পথ। তাই উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী শিক্ষার্থীদের আইবিএতে পড়ার বিষয়ে চিন্তা করা উচিত।

 

FAQ

প্রশ্ন: Iba তে পড়তে কত টাকা লাগে?

উত্তর: রেগুলার Iba করতে মোট খরচ প্রায় ১ লাখ টাকা, আর এক্সিকিউটিভ Iba খরচ প্রায় ৩ লাখ টাকা। রেগুলার Iba কোনো অভিজ্ঞতা প্রয়োজন নেই, তবে এক্সিকিউটিভ Iba করতে হলে কমপক্ষে ৫ বছরের পূর্ণকালীন চাকরির অভিজ্ঞতা লাগবে।

প্রশ্ন: আইবিএ ভর্তি পরীক্ষায় কি ক্যালকুলেটর ব্যবহার করা যাবে?

উত্তর: ভর্তি পরীক্ষায় ক্যালকুলেটর ব্যবহার করা যাবে না। এছাড়া, বিশ্লেষণাত্মক দক্ষতা বিভাগটি আপনার যুক্তি ও বিশ্লেষণ করার সক্ষমতা মূল্যায়ন করবে।

প্রশ্ন: ঢাবির আইবিএতে ভর্তির যোগ্যতা কী?

উত্তর: আবেদনের যোগ্যতা:

যেকোনো বিষয়ে ৪ বছর মেয়াদি স্নাতক ডিগ্রি প্রয়োজন।

অথবা, ৩ বছর মেয়াদি স্নাতক ডিগ্রির সঙ্গে ১ বছরের স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকতে হবে।

সিজিপিএ ৪-এর মধ্যে অন্তত ২.৫০ থাকতে হবে।

এসএসসি ও এইচএসসি উভয় পরীক্ষায় পৃথকভাবে জিপিএ ৫-এর মধ্যে অন্তত ৩ থাকতে হবে।

Sharing Is Caring:

Leave a Comment