আইসক্রিম ব্যবসার আইডিয়া: নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য সেরা গাইড

আইসক্রিম তৈরির ব্যবসা বর্তমান সময়ে খুবই লাভজনক একটি ব্যবসার মধ্যে অন্যতম। এই ব্যবসা চাইলে আপনি খুব সহজেই শুরু করতে পারেন। আপনি চাইলে প্রথমে ছোটখাটো ভাবেও এই ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন। আইসক্রিম হচ্ছে বিভিন্ন সুস্বাদু খাবারের সংমিশ্রণে তৈরি একটি খাবারের পদ। যেমন আইসক্রিম তৈরিতে ব্যবহার করা হয় মাখন, ডিম, দুধ, মিষ্টি জাতীয় ফলের রস ইত্যাদি। সাধারণত বেশিরভাগ সময়ই মিষ্টি জাতীয় খাবার আইসক্রিমে ব্যবহার করা হয়।

আজকের আমাদের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন কিভাবে একটি আইসক্রিমের ব্যবসা শুরু করবেন। তো চলুন জেনে আসা যাক আইসক্রিম ব্যবসায়ের আইডিয়া।

আইসক্রিম ব্যবসা কিভাবে করবেন

প্রথমত একটি আইসক্রিম ব্যবসা শুরু করতে চাইলে আপনার কাছে ব্যবসায়ের জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা থাকতে হবে। প্রথমে আপনাকে কিনতে হবে একটি ফ্রিজিং মেশিন। যেখানে তৈরি হবে আইসক্রিম। এই মেশিনে নুন জল দিয়ে বরফ তৈরি করতে হবে। তারপর ওই মেশিনের ভিতরেই তৈরি হবে আইসক্রিম। আপনি বাজারে চলতি সমস্ত রকমের আইসক্রিম তৈরি করতে পারবেন একটি মেশিনের সাহায্যে।

আইসক্রিম তৈরির মেশিন ছাড়াও আপনাকে বেশ কয়েকটি ডিপ ফ্রিজ কিনতে হবে। এগুলো আপনার কাজে লাগবে। এগুলো আপনার তৈরিকৃত আইসক্রিম বা প্রোডাক্ট রাখার কাজে লাগবে। আপনি আপনার বুদ্ধিমত্তা দিয়ে যতরকম স্বাদের আইসক্রিম তৈরি করতে পারবেন, ততই আপনার ব্যবসায় লাভ হবে। ফুলেফেঁপে উঠবে আপনার ব্যবসা।

এই ব্যবসা শুরু করতে আপনার মোটামুটি ভাবে ১০,০০,০০০ টাকা হাতে নিয়ে আপনাকে নামতে হবে। কারণ আইসক্রিম তৈরির জন্য যে মেশিনটি আপনাকে কিনতে হবে, সেটির প্রাথমিক মূল্য ৭ থেকে ৮ লক্ষ টাকা। তাছাড়া আপনি আলাদা যে ডিপ ফ্রিজ গুলা কিনবেন সেগুলোরও একটি নির্দিষ্ট দাম রয়েছে। ব্যবসা শুরুর জন্য কিনতে হবে আইসক্রিম তৈরির কাঁচামাল। থাকতে হবে বিশেষ বিদ্যুৎ সংযোগ।

আইসক্রিম তৈরির কাঁচামাল

এখানে আমি আইসক্রিমের মূল উপাদান গুলো উল্লেখ করছে। যদিও আইসক্রিম তৈরিতে বিভিন্ন উপাদান এবং রেসিপি ব্যবহার করা হয়। তবে আইসক্রিমের রেসিপি এবং প্রকারের উপর নির্ভর করে কাঁচামাল পরিবর্তিত হতে পারে। তবে আইসক্রিম তৈরির ব্যবসায় সাধারণত নিম্নলিখিত এই কাঁচামাল গুলো ব্যবহার করা হয়।

  • দুধ
  • মাখন
  • চর্বি
  • ক্রিম
  • দুধের গুঁড়ো
  • চিনি
  • স্টেবিলাইজার, যেমন গুয়ার গাম
  • ইথাইল
  • সেলুলোজ
  • সুগন্ধি এবং রং ইত্যাদি

আইসক্রিম তৈরির প্রধান উপকরণ গুলো হচ্ছে এগুলোই। আপনি যদি ভিন্ন কোন স্বাদের বা বিদেশি কোন আইসক্রিম বানাতে চান, তবে উপাদানের পরিবর্তন হতে পারে।

আইসক্রিম তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি

আইসক্রিম প্রধানত দুই ভাগে উৎপাদন করা যায়। কনডেন্সিং সেকশন এবং ফ্রিজিং সেকশন। কনডেন্সিং সেকশনে হেভি ডিউটি ফ্রিক কনডেন্সিং মেশিনের সাহায্যে নেওয়া হয়, যেখানে ফ্রিজিং সেকশনে এই কাজটি ফ্রিজিং মেশিন এবং স্টোরেজ ক্যাবিনেটের সাহায্যে করা হয়।

তাছাড়া, আইসক্রিম তৈরির ব্যবসার জন্য উদ্যোক্তার কিছু ছোট সরঞ্জাম যেমন এক্সপানশন ভালব এবং কপার টিউব ইত্যাদির প্রয়োজন হতে পারে। কনডেন্সিং ইউনিটটি বৈদ্যুতিক মোটর দিয়ে চালানো যেতে পারে, এটি পেট্রোল দিয়েও চালানো যেতে পারে।

আইসক্রিম তৈরির প্রক্রিয়া

আইসক্রিম তৈরির বিভিন্ন উপায় রয়েছে।, এখানে একটি সাধারন পদ্ধতি দেয়া হয়েছে। যা বেশিরভাগ আইসক্রিম ব্যবসায়ীরা অনুসরণ করেন। এই প্রক্রিয়াটিকে সাতটি ধাপে ভাগ হয়_

১. মিশ্রিত উপাদান

প্রথমে দুধ, জল, চিনি ইত্যাদি মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করতে হবে। এই মিশ্রণ দিয়েই আইসক্রিম তৈরি করা হবে।

২. ব্যাকটেরিয়া মারার কায়দা

যে মিশ্রণটি তৈরি করা হয়েছে, সেই মিশ্রণটি ২৫ থেকে ৩০ মিনিটের জন্য ৭২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে গরম করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে এ সময় শুধুমাত্র দুধ জল এবং চিনি যোগ করা হয়। অন্যান্য উপকরণ পরে যোগ করা হয়।

৩. এরপরে,

অন্যান্য উপাদান যোগ করা হয়। মিশ্রণটি ভালোভাবে মেশানোর পর চার থেকে পাঁচ ঘন্টা ধরে ঠান্ডা করতে হয়। এটি ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি ধ্বংস করে। অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, ঠান্ডা করার পর মিশ্রণের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ফারেনহাইট এর উপরে যাতে না যায়। ৪০ ডিগ্রী ফারেনহাইট এর উপরে গেলে পুরোপুরি ভাবে আইসক্রিম পারফেক্ট হবে না।

৫. সুগন্ধি এবং রং যোগ করা

ঠান্ডা হওয়ার পরে, আইসক্রিমকে আকর্ষণীয় এবং সুগন্ধযুক্ত করতে স্বাদ এবং রং যোগ করা হয়। আপনি যদি আইসক্রিমকে একটি নির্দিষ্ট আকার দিতে চান, তবে এটি একটি ছাচে ঢেলে দিবেন।

৬. ফ্রিজিং

মিশ্রণটি একটি ছাঁচে ঢেলে জমা করে রাখা হয়। আইসক্রিম জমা করার সময় খেয়াল রাখবেন ফ্রিজারের ক্ষমতার উপর যেন না হয়। আইসক্রিম শুধুমাত্র জিরো ডিগ্রী সেলসিয়াস এর নিচেই জমে যায়। এর উপরে তাপমাত্রার প্রয়োজন হয় না।

৭. বাদাম যোগ করা

সবশেষে, আপনি কাজুবাদাম, কিশমিশ, পেস্তা, সাধারণ বাদাম ইত্যাদি যোগ করে আইসক্রিমটিকে আরো সুস্বাদু করে তুলতে পারেন। এভাবে আপনি বিভিন্ন ধরনের আইসক্রিম তৈরি করে বিভিন্ন দামে বিক্রি করতে পারেন।

আইসক্রিম তৈরীর এই ব্যবসা আপনি চাইলে বাড়িতেও করতে পারবেন। এর জন্য একটি আইসক্রিম বক্স ব্যবহার করা যেতে পারে, যাতে আপনি মিশ্রণটি যোগ করে কুলফি তৈরি করতে পারেন। অবশ্যই মনে রাখবেন আইসক্রিমের মান নির্ভর করে আপনি যে কাঁচামাল ব্যবহার করবেন তার উপর। অবশ্যই কোন বাজে কাঁচামাল ব্যবহার করবেন না। তাতে আপনার আইসক্রিমের স্বাদের ওপর প্রভাব পড়বে।

আইসক্রিমের দোকানে আর কি কি বিক্রি করা যায়

আইসক্রিম ব্যবসায়ের পাশাপাশি আপনি চাইলে ফাস্টফুড জাতীয় সকল খাবার দোকানে রাখতে পারেন। তাছাড়া কাপ কেক, সানডেস এবং মিল্কসেক বিক্রি করা যেতে পারে। কিছু পার্লার আইসক্রিম কেক, আইসক্রিম বার এবং অন্যান্য প্রি- প্যাকেজ করা হিমায়িত মিষ্টিও বিক্রি করতে পারেন। যেকোনো ডেজার্ট, গরম ফাস্টফুড, যেকোনো ড্রিংকস বিক্রি করতে পারেন।

আইসক্রিম ব্যবসায়ের জন্য লাইসেন্স প্রয়োজন

একটি আইসক্রিম তৈরির ব্যবসা শুরু করতে একজন উদ্যোক্তাকে তার ব্যবসার মালিকানার ধরন সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এরপর রেজিস্টার অফ কোম্পানিজ- এর নিয়ম অনুযায়ী রেজিস্ট্রেশন করে নিতে হবে। যদি একজন ব্যক্তি একটি প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি রেজিস্ট্রেশন করার চিন্তা করেন তাহলে তিনি এই রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়াটি গ্রহণ করতে পারেন।

তাছাড়াও, উদ্যোক্তা ট্রেড লাইসেন্স, টেক্স রেজিস্ট্রেশন এবং FSSAI লাইসেন্সের প্রয়োজন হতে পারে। FSSAI এই লাইসেন্সের সব সময় প্রয়োজন হয় না। তবে এটি করে রাখা ভালো। আর উদ্যোক্তাকে অবশ্যই তার এলাকায় অবস্থিত জেলা শিল্প কেন্দ্রে একবার যোগাযোগ করতে হবে। যাতে তিনি ব্যবসা শুরু করার পুরো প্রক্রিয়াটি বুঝতে পারেন। তাড়াহুড়া করে কোন প্রোগ্রাম মিস করলে কিন্তু চলবে না।

আইসক্রিম ব্যবসা কতটা লাভজনক

আইসক্রিম ব্যবসাটি খুবই লাভজনক একটি ব্যবসা। একটি আইসক্রিম ব্যবসা শুরু করা যেকোনো ব্যবসায়ীর জন্য  অত্যন্ত লাভজনক। তবে, ব্যবসায় যাওয়ার আগে অবশ্যই আপনার ভালো অ্যামাউন্ট থাকতে হবে। যতটুকু মূলধন ব্যবসার জন্য প্রয়োজন বলে মনে করেন, তার থেকেও অধিক মূলধন আপনি পুঁজি হিসেবে রাখবেন।

ন্যূনতম আপনাকে একটি ব্যবসার জন্য 10 লাখ টাকা রাখতে হবে। আপনি ব্যবসা একবার শুরু করলে এবং সঠিকভাবে যদি পরিচালনা করতে পারেন তাহলে প্রতি মাসেই এক লাখ বা তার উপরে আয় করতে পারবেন। ব্যবসা শুরু করার পরে অবশ্যই আপনাকে বুঝতে হবে আপনার গ্রাহকরা আপনার কাছে কি চাচ্ছে।

কিছু প্রশ্নের উত্তর

১. আইসক্রিম ব্যবসায় কত লাভ হয়?

  • আইসক্রিমের দোকানগুলির সাধারণত ১২% থেকে ১৩% পর্যন্ত স্বাস্থ্যকর লাভের মার্জিন উপভোগ করে, ব্যবসায়ের লাভ সাধারণত ব্যবসার মডেল এবং খরচ কতটা নিয়ন্ত্রিত হয় তার উপর নির্ভর।

২. আইসক্রিম মেকার কি টাকা সাশ্রয় করে?

  • আইসক্রিম মেশিনের প্রাথমিক খরচ বেশি হলেও দোকানে কেনা আইসক্রিমের তুলনায় আপনি দীর্ঘমেয়াদি যে খরচ সাশ্রয় করেন তার আইসক্রিমের গুণমান এবং দোকানে বা অনলাইনে কেনার সুবিধার জন্য অনেক কম।

৩. ঘরে তৈরি আইসক্রিম কি দোকানের চেয়ে স্বাস্থ্যকর?

  • বাড়িতে তৈরি আইসক্রিমে ক্যালরি এবং সেচুরেটেড ফ্যাট বেশি হতে পারে। তবে আমি মনে করি যে এটিতে সামগ্রিকভাবে কিছু আছে যা স্বাস্থ্যকর হতে পারে কারণ এতে কোন সংরক্ষণকারী বা কোন লুকানো উপাদান থাকবে না।

৪. আইসক্রিম কিভাবে বিতরণ করব?

  • কোম্পানিগুলো কিভাবে আইসক্রিম পরিবহন করে? আইসক্রিম হিমায়িত ট্রাক, পাত্রে এবং পণ্যবাহী জাহাজে পরিবহন করা হয়। যার সবকটিতে তাপমাত্রা বা রেফ্রিজারেশন ইউনিট রয়েছে।

৫. আইসক্রিম কোন ঋতুতে জনপ্রিয়?

  • গ্রীষ্মকালে আইসক্রিম সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। অন্য ঋতুর চাইতে গ্রীষ্মকালে আইসক্রিমে বেশি লাভ হয়।

পরিশেষে

আইসক্রিম ব্যবসায়ের কৌশলটির পারফরম্যান্স পুরোপুরি আপনার দেওয়া একচেটিয়া স্বাদ, সঠিক দাম এবং উচ্চ-পিচের চাহিদা উপর নির্ভর করে। সুতরাং, যদি আপনার সঠিক আইসক্রিম ব্যবসায়িক পরিকল্পনা থাকে এবং বিশ্বস্ততার সাথে উপরের মানদণ্ডগুলি কার্যকর করে, আপনি নিশ্চিত হতে পারেন যে আপনার নগদ নিবন্ধগুলি উপচে পড়েছে। আপনি ব্যবসায় অবশ্যই লাভবান হবেন।

Sharing Is Caring:

Leave a Comment