আর্কিটেকচার পড়তে কি কি যোগ্যতা লাগে। আর্কিটেকচার পড়ার খরচ

আর্কিটেকচার হলো সাধারণত ভবন, সেতু বা অন্য কোন কাঠামোর নকশা তৈরি বা নির্মাণের শিল্প ও কৌশল। আমরা অনেকেই আর্কিটেকচার বলতে শুধুমাত্র বিল্ডিংয়ের নকশা বুঝে থাকি। আর্কিটেকচার মানে মূলত বিল্ডিং এর নকশা নয় নান্দনিকতা কার্যকারিতা ও পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি সামগ্রিক প্রক্রিয়াকে বোঝানো হয়ে থাকে। আজকের পোস্টে আর্কিটেকচার এর কাজ কি ও আর্কিটেকচার পড়ার যোগ্যতা সহ আর্কিটেকচার পড়ার খরচ কত এই নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিতে চলেছি। তাহলে চলুন দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক:-

 

আর্কিটেকচার এর কাজ কি

ইতিমধ্যে আপনারা জেনেছেন যে আর্কিটেকচার মানে হলো সুন্দর টেকসই ও কার্যকারী ভবন সহ স্থাপত্য ও নির্মাণের বিদ্যা। আর্কিটেকচারের কাজগুলো হলো:-

১. স্থাপনার নকশা তৈরি করা

বাড়ি, মসজিদ, হাসপাতাল, স্কুল, মন্দির, ব্রিজ, শপিং মল সহ বিভিন্ন স্থাপনার নকশা তৈরি করা। অর্থাৎ এগুলো আর্কিটেকচারের কাজের মধ্যে পড়ে।

২. সঠিকভাবে পরিকল্পনা করা

কোন জায়গায় স্থাপনাটি তৈরি হবে তার সঠিক পরিকল্পনা করা। অর্থাৎ কত তোলা হবে, কোথায় রুম থাকবে, কোথায় জানালা দরজা থাকবে এবং ঘরের ভিতরে আলো বাতাস কিভাবে ঢুকবে এই সকল কিছুর পরিকল্পনা করা।

৩. সৌন্দর্য নিশ্চিত করা

প্রতিটি স্থাপনা কে দৃষ্টিনন্দন করে তোলা। তাছাড়া এখানে চেষ্টা করা হয় স্থানীয় সংস্কৃতি, ইতিহাস ও আধুনিক ধারা মিলিয়ে ডিজাইন করার জন্য।

৪.পরিবেশ বান্ধব সমাধান

সবুজ পরিবেশ নষ্ট না করে রক্ষা, বিদ্যুৎ সাশ্রয় ও প্রাকৃতিক আলু বাতাসের ব্যবস্থা করে দেওয়া।

উপরে যে পয়েন্টগুলো নিয়ে কথা বললাম সবই আর্কিটেকচারের কাজের মধ্যে পড়ে। নিচে আমরা আর্কিটেকচার নিয়ে আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে চলেছি।

আর্কিটেকচার পড়ার যোগ্যতা। আর্কিটেকচার পড়তে কি কি যোগ্যতা লাগে

আর্কিটেকচার নিয়ে যারা পড়াশোনা করতে চাই তাদের যোগ্যতার মানদন্ড পূরণ করা লাগবে। বাংলাদেশে আর্কিটেকচার পড়ার জন্য সাধারণত উচ্চমাধ্যমিক বা সমমানের পরীক্ষায় পাশ করা লাগে। তাছাড়া বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র / ছাত্রী হওয়া লাগে। তাছাড়া এখানে ফিজিক্স ও ম্যাথমেটিক্স থাকতে হবে যা সাধারণত ভবিষ্যতে স্থাপত্য ডিজাইন ও স্ট্রাকচার বলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাছাড়া আর্কিটেকচার নিয়ে পড়াশোনা করতে হলে ইংলিশে দক্ষতা সম্পন্ন হতে হবে। ইংরেজিতে ভালো হলে পড়াশোনা ও প্রজেক্ট রিপোর্ট লেখার জন্য এটি ভালো কাজ করবে।

তারপরে ভর্তি পরীক্ষা দিতে হবে। পাবলিক বা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় যেখানেই হোক না কেনো ভর্তি পরীক্ষা অবশ্যই দেওয়া লাগবে। লিখিত পরীক্ষা হয় ফিজিক্স, ম্যাথমেটিক্স ও ইংরেজি নিয়ে। তাছাড়া ড্রাই ও নকশার পরীক্ষাও নেওয়া হয়ে থাকে। কেননা আপনার ভিতরে ক্রিয়েটিভিটি বা দক্ষতা কেমন রয়েছে এটা যাচাই করা যায়। তারপরে এক পর্যায়ে সাক্ষাৎকার নেওয়া হয় অর্থাৎ আপনার ব্যক্তিত্ব, আগ্রহ ও ক্রিয়েটিভ চিন্তাভাবনা বোঝার জন্য এটা করা হয়ে থাকে।

তাহলে এখন যদি আপনাদেরকে সংক্ষেপে বোঝাই,  আর্কিটেকচার পড়ার জন্য বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাস, ফিজিক্স, ম্যাথও, ও ইংরেজিতে ভালো স্কোর, আকার দক্ষতা ও ক্রিয়েটিভিটি, তাছাড়া ভর্তি পরীক্ষায় লিখিত ও ড্রয়িং সাক্ষাৎকারে ভালো পারফরমেন্স থাকতে হবে।

আর্কিটেকচার পড়ার খরচ

আর্কিটেকচার পড়া অনেকের জন্য স্বপ্নের ব্যাপার। এই স্বপ্ন অনেকের পূরণ হয় আবার অনেকের পূরণ হয় না। কেননা আর্কিটেকচার পড়তে খরচের ব্যাপারটাও অনেকের মাথায় রাখতে হয়। বাংলাদেশের সাধারণত আর্কিটেকচার পড়ার খরচ বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে কমবেশি হয়ে থাকে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় খরচ তুলনামূলকভাবে কম হয় এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় খরচ বেশি হয়।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় যদি পড়াশোনা করেন তাহলে ভর্তি ফি, সেমিস্টার ফি, লাইব্রেরী ও ল্যাব ফি, বই ও মেটেরিয়াল ও হোস্টেল ফিসহ আরো অন্যান্য খরচ মিলিয়ে পাঁচ বছরের চার থেকে পাঁচ লাখ টাকার মত খরচ পড়বে। কিন্তু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে খরচের পরিমাণটা অনেকটাই বেশি হবে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি ফি নেওয়া হয়ে থাকে ৩০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকার মধ্যে। আরো অন্যান্য বই ও মেটেরিয়াল, সেমিস্টার, ল্যাব ফি সহ সব খরচ হিসাব করলে পাঁচ বছরে ৬ থেকে ৭ লাখ টাকার মত খরচ আসতে পারে।

নোট: আপনারা অনেকেই জানেন যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে খরচের পরিমাণ কম কিন্তু ভর্তি হওয়া অনেক কঠিন একটা ব্যাপার। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় অনেক ধরনের সুবিধা পাবেন এবং ভর্তি হওয়া অনেক সহজ যার কারণে অনেক বেশি টাকা খরচ হয়ে থাকে। আর্টিকেল নিয়ে পড়াশুনা যেমন অনেকের স্বপ্নের পথের যাত্রা অন্যদিকে সঠিকভাবে পরিকল্পিত অর্থের বিনিয়োগ। তাই যদি মনে করে থাকেন যে আর্কিটেকচার নিয়ে পড়াশোনা করবেন তাহলে সেই অনুযায়ী নিজেকে প্রস্তুত করবেন।

আর্কিটেকচার টিউশন ফি কত

আর্কিটেকচার টিউশন ফি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কম এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় অনেক বেশি নেওয়া হয়। বুয়েট, কুয়েট, চুয়েট, রুয়েট এগুলো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ায় খরচ কম সেমিস্টার প্রতি ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকার মধ্যে। পাঁচ বছরে টিউশন ফি লাগতে পারে প্রায় দুই লাখ টাকার মতো। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে BRAC, NSU, AUST, AIUB প্রতি সেমিস্টারের খরচ ৬০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। পাঁচ বছরের শুধু টিউশন ফি দেওয়া লাগতে পারে ৫ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকার মত। যেহেতু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় পরিবেশ উন্নত ও আরো অনেক ধরনের সুযোগ সুবিধা রয়েছে যার কারনে খরচ বেশি।

আর্কিটেকচার কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয় আছে

বাংলাদেশ আর্কিটেকচার নিয়ে পড়াশোনা করার জন্য কিছু পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রয়েছে বুয়েট, কুয়েট, চুয়েট, রুয়েট।  প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রয়েছে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, আসানুল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম।

শেষ কথা, আশা করি ইতিমধ্যে পোস্টটি যারা পড়েছেন তারা আর্কিটেকচার পড়ার যোগ্যতা ও আর্কিটেকচার পড়ার খরচ কত এই বিষয়ে মোটামুটি ধারণা পেয়েছেন। তারপরেও যদি এই নিয়ে কোন ধরনের প্রশ্ন থাকে বা পোস্টটি পড়ে কোন বিষয় সম্পর্কে বুঝতে কোন ধরনের অসুবিধা হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। ধন্যবাদ।

Sharing Is Caring:

Leave a Comment