বর্তমান সময়ে ইট ভাটার ব্যবসা খুবই লাভজনক ব্যবসার মধ্যে একটি ব্যবসা। যত দিন যাচ্ছে এটির চাহিদা যেন দ্বিগুণ বেড়ে চলেছে। তাই ইটভাটার ব্যবসায়ও দিন দিন লাভ বেড়ে যাচ্ছে। সঠিক নিয়মে যদি একটি ইট ভাটার ব্যবসা শুরু করা যায়, তাহলে প্রচুর মুনাফা অর্জন করা যাবে।
ইট ভাটার ব্যবসার মাধ্যমে খুব দ্রুতই একজন ব্যবসায়ী সফলতা লাভ করতে পারবে। আজকে আমি এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আলোচনা করব কিভাবে আপনি একটা ইটভাটার ব্যবসা করবেন এবং কিভাবে সফলতা অর্জন করতে পারবেন। তো চলুন জেনে আসা যাক ইট ভাটার ব্যবসা করার জন্য কি কি প্রয়োজন এবং কিভাবে করলে সফলতা অর্জন করা যাবে। জেনে নেওয়া যাক ইট ভাটা ব্যবসা সম্পর্কে পুরোপুরি।
ইট ভাটা শুরু করার নিয়ম
যদি আপনি নিজে ইট ভাটা দিতে চান তাহলে আপনার অনেক বেশি পুঁজি লেগে যাবে। অনেকেই চাইলেই এই ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন না, কারণ এই ব্যবসায়ী যেমন অধিক পরিমাণে লাভ রয়েছে, তেমনি শুরু করতে হলে পুঁজি বেশি থাকা প্রয়োজন। ইট ভাটার ব্যবসাটি বেশিরভাগই মানুষ করতে পারে না সঠিক পরিমাণে মূলধন না থাকার কারণে। তাই প্রথমে আপনাকে মুলধন একত্রে করতে হবে।
বর্তমান সময়ে এইট ভাটার ব্যবসা খুবই লাভজনক একটি ব্যবসা। সঠিক নিয়মে যদি আপনি ইট ভাটার ব্যবসাটি চালু করতে পারেন তাহলে অবশ্যই লাভবান হবেন। আপনি যদি ইট ভাটার ব্যবসাটি শুরু করতে চান। তাহলে আপনার ন্যূনতম এক কোটি টাকা মূলধনের প্রয়োজন হবে। ইট ভাটা তৈরি করার জন্য সব সময়ই খোলামেলা জায়গার প্রয়োজন হয়ে থাকে এবং প্রচুর পরিমাণ জায়গা থাকতে হয়। ভালো একটি স্থান দেখে ইট ভাটা দিতে হবে, এবং এটি যেন এমন হয় যাতে যানবাহন চলাচলের রাস্তা থাকে বা আপনি যে জমিনে ইট ভাটা করবেন সেই জমিনের একেবারে পাশেই যেন রাস্তা থাকে।
ইট ভাটা শুরু করতে পুঁজি?
একটি ইটভাটার ব্যবসা শুরু করার জন্য প্রথমত আপনার প্রচুর পরিমাণে পুঁজি থাকতে হবে। একটি ইট ভাটা তৈরি করার জন্য বিশ লক্ষ থেকে এক কোটি টাকার মত পুঁজি আপনার থাকতে হবে। প্রতি হাজার ইট তৈরি করতে প্রয়োজন হবে ৪,০০০ টাকা থেকে ৪,২০০ টাকার মত। এইট বিক্রি করতে পারবেন প্রতি হাজার ৭ হাজার থেকে ৭৫০০ টাকার মত। একটি ইটভাটা দেওয়ার পর মৌসুমে ৫০ থেকে ৮০ হাজার ইট তৈরি করা সম্ভব।
ইট ভাটা উৎপাদনে আপনাকে ব্যবসা নিয়ন্ত্রণের ধারণা অবশ্যই থাকতে হবে। কোন সময়ে ইট বেশি প্রয়োজন হয় এবং কোন সময়ে ইটের কম প্রয়োজন হয়ে থাকে সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে। আপনি যত বেশি এর উৎপাদন করবেন আপনার লাভ ও তত বেশি হবে। আপনার ইট ভাটার বিক্রিও যেমন তেমন হয়। ইট ভাটার ব্যবসা খুবই বড় একটি ব্যবসা। তাই আপনাকে ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করার ধারণা অবশ্যই রাখতে হবে। অন্যথায় আপনি ব্যবসার সফলতা অর্জন করতে পারবেন না।
ইট ভাটা তৈরি করার জন্য উপকরণ
ইট ভাটা তৈরি করার জন্য আপনার কিছু উপকরণের প্রয়োজন হবে। এবং সবগুলো উপকরণ কেনার জন্য অবশ্যই সেই পরিমাণ অর্থ আপনার থাকতে হবে। ইট ভাটা তৈরি করার জন্য আপনার প্রথমে প্রয়োজন মাটি, ছাঁচ, মাটির মন্ড তৈরির জন্য মেশিন, লুকবল, ইট পুরানো চুল্লি, চিমনি, জ্বালানি ইত্যাদি। আরো অন্যান্য কিছু উপকরণ বা মেশিনের প্রয়োজন হতে পারে তা শুধুমাত্র আপনার কাজকে সহজ করার জন্য ইট তৈরি করার জন্য নয়। ইট ভাটা চালানোর জন্য এই উপকরণগুলো অবশ্যই প্রয়োজন হবে। উপরোক্ত দেওয়া উপকরণ গুলোর মধ্যে একটিও যদি মিসিং থাকে তাহলে আপনাকে সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে।
ইট ভাটার লাইসেন্স বা ইটভাটার লাইসেন্স ফি
লাইসেন্স ছাড়া কোন ব্যবসা করা আইনত অপরাধ। তাই যে ব্যবসা করেন না কেন আপনার অবশ্যই আইনগত একটি লাইসেন্স থাকতে হবে। সরকারের অনুমোদন রেখে তারপরে আপনি ব্যবসা চালু করবেন। যেকোনো ব্যবসা করার জন্য অবশ্যই লাইসেন্স থাকতে হয়। সরকারি অনুমোদন চারা কোন ব্যবসায়ী করা যায় না। ইট ভাটা চালানোর জন্য অবশ্যই আপনাকে লাইসেন্স করতে হবে না হলে যেকোনো সময় আপনি ধরা পড়তে পারেন এবং আপনাকে জরিমানা করা হতে পারে।
আপনি চাইলে ইট ভাটা তৈরীর জন্য অনলাইনের মাধ্যমে খুব সহজেই লাইসেন্স করে নিতে পারেন। এখন আধুনিক যুগে অনলাইনের মাধ্যমে খুব সহজেই লাইসেন্স পাওয়া যায় বা করা যায়।
ইট ভাটা তৈরীর নিয়ম
সাধারণত ইট তৈরির ক্ষেত্রে বলা হয়ে থাকে ইটের ভাটা। ইট ভাটা তৈরি করা হয় সাধারণত জমিতে। অর্থাৎ যেখানে কার মাটি তৈরির জন্য উপযোগী সেই জমিতে ইট ভাটা তৈরি করা হয়। প্রথম পর্যায়ে মাটি আর পানি মিশিয়ে মনডো তৈরি করা হয়ে থাকে। তারপর এই মনডোকে কাঠের চাছে ফেলে ইটের মতো আকৃতি দেওয়া হয়। তারপরে সেগুলো খানিকটা সুখে নেয়া হয় এবং চুলার ভেতর দিয়ে সেগুলো পুরিয়ে ফেলা হয়।
মাটি পুড়িয়ে সাধারণত ইট তৈরি করা হয়ে থাকে। ইট পুরানোর জন্য কয়লা ব্যবহার করা হয় । পুড়তে পুড়তে যখন পুরোপুরি লাল হয়ে যায়। যখন একটি দেখতে লাল লাভার মতো দেখা যায়। তখন ইট পুরানো সাত থেকে পাঁচ মিনিট পর চুল্লি নিভিয়ে দেয়া হয়। তারপর সেখান থেকে বের করা হয়। তৈরি হয়ে গেছে ইট।
ইট ভাটার ব্যবসায় লাভ কেমন
আপনি যদি ইট ভাটার ব্যবসাটি করতে চান তাহলে ইট বাটার ব্যবসায় কেমন লাভ হতে পারে সেই ধারণাটি আপনার থাকা প্রয়োজন। ইট ভাটার ব্যবসায় কেমন লাভ হতে পারে সেই সম্পর্কে সঠিক ধারণা আপনাকে রাখতে হবে। এটি অবশ্যই জরুরী। ইট ভাটার ব্যবসাটি যদি সঠিক নিয়মে আপনি করতে পারেন, এক্ষেত্রে এ ব্যবসা এর মাধ্যমে বছরে ৫০ লক্ষ থেকে এক কোটি টাকা অনায়াসে লাভ করতে পারবেন। পরিস্থিতির সাথে আপনার লাভ একটু কম বা বেশি হতে পারে। যেকোন পরিস্থিতিতে আপনাকে খাপ খাইয়ে চলতে হবে।
তাই আপনি কোন কিছুতে আপোষ না করে প্রয়োজনে যা কিছু প্রয়োজন তা একত্র করে ব্যবসা চালু করবেন, এবং সব পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে চলার মত মন মানসিকতা রাখবেন অবশ্যই আপনি ব্যবসায় সফলতা অর্জন করতে পারবেন।
শেষ কথা,সঠিক নিয়মে আপনি ব্যবসা করলেন অবশ্যই আপনি ব্যবসায়ের সফলতা আনতে পারবেন , এবং ব্যবসা অধিক মুনাফা অর্জন করতে পারবেন। আশা করছি ইটভাটার ব্যবসাটি কিভাবে শুরু করবেন এবং ইটভাটা ব্যবসা শুরু করতে কি কি প্রয়োজন, কিরকম জায়গা প্রয়োজন এতক্ষণে আপনার সেই সম্পর্কে সঠিক ধারণা পেয়ে গিয়েছেন। তারপরও যদি কোন বিষয় সম্পর্কে বুঝতে অসুবিধা হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট করে জানাবেন। এবং ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। ধন্যবাদ।