ওষুধের পাইকারি ব্যবসা: কম বিনিয়োগে লাভজনক ফার্মাসি বিজনেস শুরু করার গাইড

ঔষদের পাইকারি ব্যবসা বর্তমান সময় খুবই লাভজনক একটি ব্যবসা। এখানে পুঁজি বিনিয়োগ করে সহজেই লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে। সত্যি কথা বলতে পাইকারি ব্যবসায় পুঁজি যেমন বেশি লাগে, তেমনি ব্যবসায় লাভও বেশি হয়ে থাকে। সব পরিবারেই প্রায় প্রতিদিনই কিছু না কিছু ওষুধের প্রয়োজন পড়ে। ঔষধ নিত্য দিনের প্রয়োজনীয় একটি পণ্য।

বর্তমান সময়ে জনপ্রিয় যতগুলো ব্যবসা রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম লাভজনক একটি ব্যবসা হচ্ছে ঔষধ ব্যবসা। আপনি খেয়াল করে দেখবেন, আপনার এলাকায় গত পাঁচ বছর আগে যে কয়টা ফার্মেসীর দোকান ছিল। বর্তমান সময়ে তার সংখ্যা তিন গুণ হারে বেড়ে গিয়েছে। তাই আপনি যদি ওষুধের পাইকারি ব্যবসা করতে চান এবং সঠিক পদ্ধতিতে তা করতে পারেন তাহলে আপনি অবশ্যই এই ব্যবসায় লাভবান হবেন।

কিভাবে ঔষধ নির্বাচন করবেন

আপনি যদি পাইকারি ঔষধের ব্যবসা করতে চান, তাহলে প্রথমে আপনাকে যেকোনো একটি ফার্মেসি ম্যানের বা ওষুধ বিক্রেতার কাছে যেতে হবে। তারপর আপনি তার কাছ থেকে এমন কিছু ওষুধের তালিকা সংগ্রহ করবেন, যেগুলোর প্রায় সারা বছরই প্রচুর চাহিদা থাকে।

ওষুধের ফার্মেসিতে কাস্টমার তার চাহিদা মত ঔষধ না পেলে আপনার ব্যবসায়ে বিরাট লস হতে পারে। সবসময় যে ঔষধ গুলো মানুষ কিনে থাকে। যেমন, প্যারাসিটামল, নাপা এক্সট্রা, বিভিন্ন রকমের গ্যাস্ট্রিকের ঔষধ, জ্বরের ট্যাবলেট ইত্যাদি। এগুলো মানুষের বেশি প্রয়োজন হয়। তাই আপনি যখন ওষুধের পাইকারি ব্যবসা শুরু করবেন, তখন ওষুধ নির্বাচনের ক্ষেত্রে বেশি পরিমাণে এই সাধারণ ঔষধ গুলো রাখবেন। বাজারে এই ওষুধগুলোর চাহিদা বেশি।

ওষুধ দোকানের লাইসেন্স

প্রত্যেকটি ব্যবসায়ের জন্য লাইসেন্স প্রয়োজন হয়। আর ওষুধ ব্যবসার জন্য অতি প্রয়োজনীয় এই ড্রাগ লাইসেন্সটি ইস্যু করে বাংলাদেশ সরকার”ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর”। ঔষধের ব্যবসাটি শুরু করার জন্য আপনার তিন প্রকারের কাগজের প্রয়োজন হবে।

  • ট্রেড লাইসেন্স
  • ড্রাগ লাইসেন্স
  • ফার্মাসিস্ট কোর্স কমপ্লিট করা সার্টিফিকেট

এক্ষেত্রে আপনার যদি ফার্মাসিস্ট কোর্স কমপ্লিট করা সার্টিফিকেট না থাকে, তাহলে আপনার পাইকারি দোকানে এমন একজন কর্মচারী রাখতে হবে, যার ফার্মাসিস্ট কোর্স কমপ্লিট করা সার্টিফিকেট রয়েছে।

পাইকারি ড্রাগ লাইসেন্সের জন্য যেসব কাগজপত্র প্রয়োজন

  • আবেদন ফরম
  • লাইসেন্স ফি ১০ হাজার টাকা, ট্রেজারি চালানোর মূল কপি এবং চালানোর উপর ১৫% ভ্যাট প্রদান করতে হবে।
  • দোকানের আপডেট ট্রেড লাইসেন্স এর ফটোকপি
  • মালিকের এনআইডির ফটোকপি
  • ব্যাংক সলভেন্সি সার্টিফিকেট
  • ৩০০ টাকার স্ট্যাম্প ও দোকান ভাড়ার চুক্তিনামা/দোকানভাড়ার রশিদের কপি/নিজস্ব জায়গা হলে প্রমাণের কাগজপত্র।
  • মডেল ফার্মেসির এ গ্রেডের দোকানের সাইজ মিনিমাম হতে হবে ৩০০ বর্গফুট, মেডিসিন শপের বি গ্রেডের বা সি গ্রেডের দোকানের সাইজ ১২০ বর্গফুট।

কোথা থেকে ঔষধ কিনবেন

আপনাকে পাইকারি দামে ঔষধ কিনতে হলে, মিটফোর্ড বাবু বাজারে যেতে হবে। এটি বাংলাদেশের অন্যতম বড় ঔষধের পাইকারি বাজার। এটি স্যার সলিমুল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাথে অবস্থিত।

এখান থেকে যেকোনো কোম্পানির যেকোনো রকমের ঔষধ পাইকারি দামে ক্রয় করতে পারবেন। এছাড়া আপনি সরাসরি বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির নিকট থেকেও ওষুধ কিনতে পারবেন। বাংলাদেশের বড় এবং বিখ্যাত কিছু ঔষধ কোম্পানি রয়েছে।

ঔষধ কোম্পানির নামের তালিকা

১) এসিআই ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড

২) ল্যাভ এইড ফার্মাসিটিক্যাল লিমিটেড

৩) বেক্সিমোকো ফার্মাসিউটিক্যাল

৪) ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড

৫) ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড

৬) এস কে এফ ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড

৭) রেনাটা ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড

৮)এরিস্টো ফারমার্সিউটিক্যাল লিমিটেড

৯) জিস্কা ফার্মাসিটিক্যাল লিমিটেড

কেন আপনি ওষুধ কিনবেন

আপনার মনে অবশ্যই প্রশ্ন আসতে পারে, যেহেতু প্রতিটা কোম্পানি তাদের নিজস্ব রিপ্রেজেন্টেটিভ বা প্রতিনিধির মাধ্যমে প্রতিটি ফার্মেসির দোকানে ঔষধের সাপ্লাই করে থাকে, তাহলে আমি নিজে কেন ওষুধ কিনে ফার্মেসিতে নিব? তাহলে জানা যাক কেন নিজে ওষুধ কিনবেন।

  • আসলে কিছু কিছু কোম্পানি আছে যাদের দোকানে ঔষধ সাপ্লাই দেওয়ার মত কোন প্রতিনিধি নেই। আপনি চাইলে সেই কোম্পানি গুলোর ঔষধ আনতে পারেন।
  • এছাড়াও ফার্মেসিতে এমন অনেক আইটেম রয়েছে যেগুলো বিক্রয় করার মত কোন প্রতিনিধি থাকে না। বাবুবাজার থেকে বিভিন্ন লোকের মাধ্যমে এগুলো ফার্মেসিতে পৌঁছায়।
  • সকল কোম্পানির কিছু কিছু ঔষধ থাকে, যেগুলো আন্ডাররেটে বিক্রয় করা হয়। এখানে আন্ডারেট মানে, সাধারণত মার্কেটের ফার্মেসিতে যে দামে বিক্রয় হয় বাবুবাজারে তার থেকে অনেক কম দামে বিক্রি হয়।
  • তো আপনি চাইলে বাবুবাজার থেকে ওষুধ কিনে এলাকার ফার্মেসী গুলোতে সাপ্লাই দিতে পারেন। এতে করে আপনি ওষুধ বিক্রি করে ৫% অথবা ৬% এমনকি ১০% লাভ করতে পারবেন।
  • এখানে আপনার জন্য দুই প্রকার সুযোগ রয়েছে। আপনি চাইলে যেকোনো একটি অথবা দুটি সুযোগই কাজে লাগাতে পারেন এবং সেগুলো নিয়ে আপনি খুব চমৎকার ব্যবসা দাঁড় করাতে পারেন।

ওষুধের ব্যবসা পুঁজি

যে কোম্পানিগুলোর ঔষধ বিক্রয়ের জন্য কোন প্রতিনিধি নেই। আপনি যদি তাদের ওষুধ বিক্রি করতে চান তাহলে এক্ষেত্রে পুঁজির পরিমাণ খুবই সামান্য লাগবে। যারা ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকার মধ্যে চমৎকার একটি ব্যবসার খোঁজ করছেন এই ব্যবসাটি তাদের জন্যই।

যারা বাবুবাজার এর আশেপাশে অথবা ঢাকার আশেপাশে বসবাস করছেন। তারা চাইলে খুব সহজেই এই ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন। আর যারা উত্তরবঙ্গে বসবাস করছেন, তারা বগুড়া থেকে ঔষধ সংগ্রহ করতে পারেন। কারণ বগুড়ায় অনেক বড় ওষুধের মার্কেট রয়েছে। যেটাকে আসলে মিটফোর্ডই বলা হয়।

ঔষধ কিভাবে কিনবেন

আপনি যে ওষুধগুলো কিনতে চান, আপনার এলাকার পরিচিত কোন ফার্মেসি ম্যান বা দোকানদারকে বলবেন একটা লিস্ট করে দিতে। তারপর আপনি সরাসরি বাবুবাজার চলে যাবেন। অবশ্যই প্রথম প্রথম আপনার এই ব্যবসায় ইতস্তত বোধ হতে পারে। সকল ব্যবসায় ঝুঁকি রয়েছে।

নতুন একটি ঝুঁকি নিতে যাচ্ছেন অবশ্যই আপনার টেনশন কাজ করবে, তাতে কোন সমস্যা নেই। আপনি আপনার কাছের কোন বন্ধুকে নিয়ে চলে যাবেন সেখানে। ঔষধ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি জিনিস।

সর্বদা যাচাই-বাছাই করে ভালো প্রোডাক্টটি কিনার চেষ্টা করবেন। ওষুধ কেনা হয়ে গেলে সেখানে অনেক লেবার পাবেন। লেবার মানে হচ্ছে যারা পণ্য বুঝাই করে নিয়ে যায়। তাদেরকে দিয়ে আপনি আপনার প্রোডাক্ট গুলো ভাল করে বেঁধে নিয়ে আসবেন।

ঔষধ কিভাবে নিয়ে আসবেন

আপনি মূলত দুইভাবে ঔষধ নিয়ে আসতে পারেন।

  • নিজের সাথে করে
  • কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে

দুই মাধ্যমেই আপনার গাড়ি ভাড়ার খরচ পড়বে। তবে আপনি যদি কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে প্রোডাক্ট নিয়ে আসেন, সেক্ষেত্রে আপনার নিজের কষ্টটা কমবে এছাড়া আর কিছু না।

কিভাবে ওষুধ সাপ্লাই দিবেন

ঔষধ সাপ্লাইয়ের জন্য আপনি চাইলে নিজে সাপ্লাই দিতে পারেন বা আলাদা একজন সাপ্লায়ার রাখতে পারেন। আপনার এলাকায় যতগুলো ওষুধের দোকান রয়েছে, সেগুলো প্রথমে আপনি ভিজিট করবেন। প্রয়োজনে আপনি আপনার সঙ্গে ঔষধ গুলো নিয়ে দোকানে দোকানে গিয়ে ওষুধ অর্ডার করতে পারেন।

সেক্ষেত্রে আপনি সাথে বাইক বা সাইকেল ব্যবহার করতে পারেন। আপনি নিজে না গিয়ে এই ক্ষেত্রে আপনি আপনার একজন কর্মচারীকে রাখতে পারেন। আপনি ফার্মেসীগুলোতে গিয়ে আপনার প্রোডাক্ট গুলো দেখাবেন। আপনি দেখবেন প্রথমদিকেই আপনার খুব ভালো পরিমাণ একটা বিক্রি হচ্ছে।

যদিও আপনার কাছে বিষয় একটু অকল্পনীয় লাগতে পারে, কিন্তু আপনি যদি সঠিক ঔষধ নির্বাচন করতে পারেন এবং সঠিকভাবে ব্যবসা শুরু করতে পারেন তাহলে অবশ্যই ভালো কিছুই হবে। আপনি অবশ্যই খুব কম সময়ে ব্যবসায় সফলতা অর্জন করতে পারবেন।

ঔষধ ব্যবসায়ের সাবধানতা

পাইকারি ওষুধ ব্যবসায় শুরু করার জন্য আপনাকে কিছু সাবধানতা অবশ্যই অবলম্বন করতে হবে।

  • বিদেশি ঔষধ যেগুলো বাংলাদেশ অনুমতি নাই, সেগুলো রাখা যাবে না।
  • অধিক লাভের আশায়, নকল ঔষধ রাখা যাবে না।
  • কারণ আমাদের দেশের বর্তমান প্রশাসন অনেক সচ্চার এই ঔষধ খাতকে পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য।

ওষুধের পাইকারি ব্যবসা শুরু করার আগে উপরোক্ত এই বিষয়গুলোতে অবশ্যই মনোযোগী হতে হবে। বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিলের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নীতিমালা প্রকাশ করা হয়। আপনি চাইলে তাদের ওয়েবসাইট থেকে তাদের নীতিমালা গুলো অনুসরণ করতে পারেন।

কিছু প্রশ্নের উত্তর

ওষুধ ব্যবসায় লাভ কেমন?

  • আপনার যদি ঔষধ সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান তাকে এবং ব্যবসা পরিচালনার দক্ষতা থাকে তাহলে ফার্মেসি ব্যবসা করে কমপক্ষে 20% লাভ করা সম্ভব।

ওষুধের পাইকারি ব্যবসা শুরু করতে  কি লাগে?

  • ওষুধের পাইকারি ব্যবসা দিতে কিছু কাগজপত্রের প্রয়োজন হবে। ফার্মাসিস্ট সনদ, ড্রাগ লাইসেন্স, ট্রেড লাইসেন্স। একটি ফার্মেসী দোকান দিতে এই তিনটি জিনিস প্রয়োজন।

ওষুধ পাইকারি ওষুধের দোকানে কি বিক্রি করা যায়?

  • ওষুধ প্রস্তুতকারকের দোকানে যত্ন সহকারে সাজানো সুস্থতা পণ্যের একটি সংগ্রহ রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে প্রয়োজনীয় তেল  এবং বেসজ পণ্য, ব্যাথা উপশমকারী টপিকাল, স্ফটিক, মেসাজ সরঞ্জাম ইত্যাদি।

পরিশেষে

প্রতিষ্ঠিত ও সম্মানজনক ব্যবসা এর মধ্যে ঔষধের পাইকারি ব্যবসা অন্যতম। আপনি অনেকের কাছ থেকেই শুনতে পারেন যে মিটফোর্ডে দুই নম্বর ওষুধ বিক্রি হয়। দেখুন প্রতিটি সেক্টরে অসাধু ব্যবসায়ী রয়েছে। আপনি তাদেরকে এড়িয়ে চলবেন এবং সৎভাবে নিজের ব্যবসা শুরু করবেন। আপনি সৎ পথে যে রিযিক পাবেন, সেখানে আলাদা একটি মনের প্রশান্তি রয়েছে।

আর ওষুধ এমন একটি প্রোডাক্ট যেটা দুই নাম্বার হলে বা নকল হলে মানুষের জীবনের ঝুঁকি রয়েছে। তাই যতটা সম্ভব ভালো প্রোডাক্ট কিনে ব্যবসা করার চেষ্টা করবে। ইনশাল্লাহ আপনি ব্যবসা খুবই তাড়াতাড়ি সফল হবেন। এতক্ষণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

Sharing Is Caring:

Leave a Comment