জিরার ব্যবসা করার লাভজনক আইডিয়া

 

আপনি কি জিরার ব্যবসা করতে চান? বুঝতে পারছেন না কিভাবে এই জিরার ব্যবসাটি শুরু করবেন? বাংলাদেশের প্রচুর পরিমাণ জিরার প্রয়োজন হয় সেজন্য জিরার ব্যবসা শুরু করলে আপনি অনেক লাভবান হতে পারবেন। জিরার ব্যবসা শুরু করার আগে আপনাকে কিছু নিয়ম-কানুন মেনে তারপর ব্যবসাটি শুরু করতে হবে। কিছু নিয়মকানুন মেনে এবং কিছু টেকনিক অবলম্বন করে খুব সহজেই আপনি এই ব্যবসাটি শুরু করতে পারবেন।

জিরার ব্যবসা করার নিয়ম

জিরা সাধারণত দুই ধরনের পাওয়া যায়। সাদা জিরা এবং কালো জিরা। আপনি চাইলে কালো বা সাদা যেকোন একটি জিরার ব্যবসা শুরু করতে পারেন। তবে সাদা জিরার থেকে কালো জিরার চাহিদা বেশি। আপনি পাইকারি বা খুচরা যেকোন একটি ব্যবসা করতে পারেন।

প্রথমে একটি ভালো মানের দোকান নিতে হবে এবং অবশ্যই ভালো একটা পজিশনে থাকতে হবে। আপনি যেহেতু জিরার ব্যবসা করছেন তাহলে প্রথমত আপনি একটি ডিসপ্লে করবেন সেটা হচ্ছে শুধুমাত্র জিরার। যেহেতু আপনি শুধুমাত্র জিরার ব্যবসা করবেন। আপনি কয়েক জাতের জিরা দোকানে এনে রাখবেন।

৪টি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ 

১. জিরা গুড়া করার মেশিন এবং ব্যবসার নাম ঠিক করা

জিরার ব্যবসা শুরু করার আগে আপনাকে জিরা গুড়া করার জন্য মেশিন কিনতে হবে। মেশিন ছাড়া আপনি মশলা গুড়া করতে পারবেন না, অতএব আপনি ব্যবসা শুরু করতে পারবেন না। মশলা গুড়া করার মেশিনের দাম নির্ভর করে তার স্পিড এবং ক্যাপাসিটির উপর।

২. ম্যাটেরিয়াল সংগ্রহ করা

মেশিনের ব্যবস্থা করার পর আপনার দরকার হবে ম্যাটারিয়াল (জিরা), যা দিয়ে আপনি মশলা তৈরি করবেন। মেটারিয়াল না থাকলে মেশিন দিয়ে কোন লাভ হবে না তাই সর্বপ্রথম আপনাকে মেশিন এবং ম্যাটারিয়াল জোগাড় করতে হবে।

৩. প্যাকেট তৈরি

অবশ্যই আপনি যখন ব্যবসা শুরু করবেন তখন আপনি আপনার ব্যবসার নাম দিবেন। যাতে এই নাম ব্যবহার করে আপনি ব্যবসা পরিচালিত করতে পারেন। আপনি কোম্পানির নাম দিয়ে প্যাকেট তৈরি করতে পারেন। কোম্পানির নাম দিয়ে প্যাকেট তৈরি করলে আপনার কোম্পানির প্রচার হবে এবং পাশাপাশি গ্রাহকরা সহজেই আপনার মশলা বাজারে খুঁজে বের করতে পারবে।

প্যাকেট তৈরি করার সময় মনে রাখতে হবে

 

🔶 প্যাকেট আকর্ষণীয় হতে হবে

🔶 কোম্পানি বা ব্র্যান্ডের নাম স্পষ্ট হতে হবে

🔶 মশলা তৈরির উপকরণ লেখা থাকতে হবে

 

জিরার ব্যবসা করতে কত টাকা মূলধন প্রয়োজন

৫০ হাজার টাকা থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত যেকোন পরিমান টাকা নিয়ে ব্যবসা শুরু করতে পারবেন। মূলধন নির্ভর করে আপনি কি পরিমান পণ্য নিয়ে ব্যবসা শুরু করতে চাচ্ছেন। শুধু একটি মসলা নিয়ে শুরু করলে খরচ কম হবে। আবার অনেকগুলো পণ্য নিয়ে ব্যবসা শুরু করলে মূলধন বেশি লাগবে।

কাচামাল পাইকারি দোকান থেকে কিনে সেটা মিলে গুঁড়া করে বিক্রি করলে খরচ কম হবে। কিন্তু নিজেই মেশিন দ্বারা গুড়া করলে মূলধন বেশি লাগবে।

জিরার পাইকারি বাজার

নিচে কয়েকটি বিখ্যাত বাজারের কথা বলব যে বাজারগুলো দেখে ঘুরে আসলে অবশ্যই আপনি জিরা কিনার জন্য ভালো ধারণা পাবেন এবং পাইকার হিসেবে কিনতে পারবেন।

🔸পুরান ঢাকায় অবস্থিত ঢাকার মৌলভীবাজার। এখান থেকে আপনি সম্পূর্ণ পাইকারিতে মসলা কিনতে পারবেন। বিশেষ করে ইরানি মসলা এবং ভারতীয়সহ মিডিলইস্ট সকল মসলা পাবেন এখানে সম্পূর্ণ পাইকারি দামে।

🔸দ্বিতীয় হচ্ছে কাওরান বাজার। কাওরান বাজার থেকে মূলত সারা বাংলাদেশের পাইকারি মসলা কিনে থাকে। দেশি-বিদেশি সকল মসলা এখানে পাইকারি দামে পাওয়া যায়।

🔸আরেকটি হচ্ছে যাত্রাবাড়ী। এখান থেকে আপনি পাইকারি দামে মসলাগুলো পাবেন। পাইকারি দামে কিনে আপনি নিজ এলাকার বিজনেস করতে পারেন।

জিরার ব্যবসায় সফল হওয়ার কিছু কৌশল 

জিরার ব্যবসায় সফল হতে হলে আপনাকে কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে এবং কিছু কৌশল অবলম্বন করতে হবে।এবং ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে সব সময় সৎ থাকতে হবে,গ্রাহকদেরকে ভালো পণ্যগুলো দেয়ার চেষ্টা করবেন এবং গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য রাখবেন। আরো কতগুলো উপায় রয়েছে_

  • ভালো একটি স্থান নির্বাচন করতে হবে এবং জায়গাটি সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। আকর্ষণীয় রাখতে হবে।
  • ক্রেতাদের সাথে ভালোভাবে ব্যবহার করতে হবে এবং তাদেরকে ভালো সার্ভিস দিতে হবে।
  • গ্রাহকদের মনোযোগ নেওয়ার জন্য তাদের সাথে সুন্দর করে কথা বলতে হবে। কোন উপায়ে যেন গ্রাহকরা অসন্তুষ্ট না হয়।
  • নিজেকে আধুনিকভাবে উপস্থাপন করতে হবে।
  • ব্যবসা বিক্রি বাড়ানোর জন্য আধুনিক আইডিয়াগুলো ব্যবহার করতে হবে।
  • এবংদোকানের পণ্য গ্রাহকদের কাছে ভালোভাবে উপস্থাপন করতে হবে।

 

উপরোক্ত বিষয়গুলো মাথায় রেখে ব্যবসা শুরু করতে হবে। তাহলে ব্যবসাতে খুব অল্প সময়ের মধ্যে লাভবান হওয়া যাবে।

গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরামর্শ

ব্যবসার ক্ষেত্রে কিছু পরামর্শ অনুসরণ করলে ব্যবসায় সহজেই সফলতা অর্জন করা যায়। যেমন_

১. সঠিক স্থান নির্বাচন 

ব্যবসা শুরু করার পূর্বে প্রথমেই আপনার কাজ হচ্ছে সঠিক একটি জায়গা নির্বাচন করা। কোথায় আপনি ব্যবসা করবেন এবং সেই জায়গায় মানুষের আনাগোনা কেমন। সবদিক বিবেচনায় রেখে আপনাকে স্থান নির্বাচন করতে হবে।

২.অনুমতি সংগ্রহ 

ব্যবসা করতে হলে জায়গার জন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষ থেকে অবশ্যই আপনাকে অনুমতি নিতে হবে। অবশ্যই ট্রেড লাইসেন্স থাকতে হবে। অনুমতি না নিয়ে ব্যবসা শুরু করলে পরবর্তী সময়ে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। জরিমানা দেওয়া লাগবে বা দেখা যেতে পারে ব্যবসা বন্ধ করতে হয়।

৩. ব্যবসার ধরন

আপনি কোন ধরনের ব্যবসা শুরু করতে চাচ্ছেন, খাবারের ব্যবসা নাকি কাপড়ের ব্যবসা। আর অন্যান্য ব্যবসা যেমন চটপটি, ফল বা সবজি বিক্রি, বিভিন্ন চপ, স্যান্ডউইচ ইত্যাদি।

৪. একটু ভিন্নতা

খেয়াল রাখুন আপনার আশেপাশের ব্যবসায়ীরা কোন ধরনের ব্যবসা করছে। আপনি চেষ্টা করবেন তাদের থেকে একটু আলাদা টাইপের কোন ব্যবসা শুরু করার। নতুন কিছুর ব্যবসা করলে আপনি সহজেই লাভবান হবেন।

৫. পণ্য নির্বাচন ও গবেষণা 

অন্যের গুনাগুন, মান, চাহিদা এবং বাজারের অবস্থা বুঝে ব্যবসা শুরু করতে হবে। বিশেষ করে কাস্টমারদের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য ব্যবসায় আনতে হবে। জীবনযাত্রার উপর নির্ভরশীল পণ্য বেছে নিতে পারেন ব্যবসায়ের জন্য। তাতে আপনার ব্যবসার সহজেই জনপ্রিয় হয়ে উঠবে।

৬. বিজ্ঞাপন

সকল ব্যবসা শুরু করার পর নতুন অবস্থায় বিজ্ঞাপন বা প্রচারণা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সঠিকভাবে প্রচার করার জন্য আপনি সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করতে পারেন। এবং অবশ্যই নিজের ব্যবসা একটি সাইনবোর্ড দিয়ে শুরু করবেন, এটাও কিন্তু এক ধরনের প্রচার।

শেষকথা, জিরার ব্যবসা অনেক লাভজনক একটি ব্যবসা হতে পারে। যদি আপনি নিয়মকানুন মেনে চলেন এবং জিরার মসলায় কোন রকমের ভেজাল ব্যবহার না করেন। ভালো মানসম্মত মসলার গুড়া তৈরি করলে আপনার মসলা গ্রাহকদের অনেক পছন্দ হবে এবং আপনার ব্যবসা উন্নতির মুখ দেখবে খুব সহজেই। আপনি যদি পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ে থাকেন, তাহলে এতক্ষণে অবশ্যই বুঝে গেছেন একটি জিরার ব্যবসা কিভাবে করতে হয়।

 

লোকেশন নির্বাচন, মানসম্পন্ন পণ্য, ভালো গ্রাহকসেবা এবং আধুনিক মার্কেটিং কৌশল ব্যবহার করলে ব্যবসার সফলতা নিশ্চিত করা যায়। আশা করি, এই গাইড আপনার জন্য সহায়ক হবে এবং আপনার ব্যবসায় সফলতা বয়ে আনবে। মনে রাখবেন ব্যবসায় সফল হতে হলে হতে হবে পরিশ্রমে এবং ধৈর্যশীল। এতক্ষণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

Sharing Is Caring:

Leave a Comment