ঠিকাদারি ব্যবসার আইডিয়া। ঠিকাদারি লাইসেন্স করতে কত টাকা লাগে

 

ঠিকাদারী ব্যবসা কি 

ঠিকাদারী ব্যবসা কি? এর মূল অর্থ হচ্ছে টাকার বিনিময়ে কাজ সম্পন্ন করে দেওয়া। অর্থাৎ সহজ অর্থে কনট্রাকে কাজ করে দেওয়া। নির্দিষ্ট টাকার বিনিময়ে কোন কাজ লোক মারফত তৈরি করে দেওয়া অথবা কোন পণ্য নির্দিষ্ট স্থানে স্থানান্তর করে দেওয়া। যেমন রাস্তাঘাট, বিল্ডিং , কমপ্লেক্স তৈরি করা, কোন জিনিসপত্র ক্রয় করে নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছিয়ে দেওয়া ইত্যাদি। এইসব কাজোই ঠিকাদারি ব্যবসায়ীরা করে থাকে।

ঠিকাদারগণ কি কি কাজ করে থাকে

ঠিকাদারগণ চুক্তিতে রাস্তাঘাট, ব্রিজ, ভবন নির্মাণ করা, পণ্য সরবরাহ করে দেওয়া, আসবাবপত্র তৈরি করে দেওয়া, পণ্য স্থানান্তর করে দেওয়া ছাড়াও আরো অনেক কাজ রয়েছে যেগুলো ঠিকাদারগন করে থাকেন। মূলত তাদের কাজই হচ্ছে এগুলো।

ঠিকাদারি ব্যবসার বিভিন্ন ধরন 

ঠিকাদারি ব্যবসার বিভিন্ন ধরন রয়েছে। নিম্নে ঠিকাদার ব্যবসা সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের এবং প্রকার নিয়ে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হল।

সাধারণ ঠিকাদার: 

সাধারণ ঠিকাদারদের কাজ হলো বিভিন্ন ধরনের নির্মাণ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা। তারা সাধারণত এই ধরনের কাজের বাইরে অন্য কোন কাজ করে না। তাই এদেরকে সাধারণ ঠিকাদার হিসেবে ধরা হয়।

বিশেষ ঠিকাদার: 

ঠিকাদারদের মধ্যে থেকে বিশেষ ঠিকাদার হলো তারাই যারা কোন নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে কাজ করে থাকে। যেমন ইলেকট্রনিক্যাল, এয়ার কন্ডিশনিং, প্লাম্বিং ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ রয়েছেন। যারা মূলত এই ধরনের কাজ সম্পন্ন করে থাকেন।

সরকারি ঠিকাদার:

ঠিকাদারদের মধ্যে যাদের ঠিকাদারি ব্যবসা সম্পর্কে ভালো দক্ষ অভিজ্ঞতা এবং শিক্ষা রয়েছে এবং তারা সরাসরি বিভিন্ন সরকারি নির্মাণ পরিকল্পনার কাজ পেয়ে থাকে, তাদেরকে সরকারি ঠিকাদার বলা হয়। সরকারি ঠিকাদার মূলত সরকারি কাজে লিপিবদ্ধ থাকে, সরকারি কাজ ব্যতীত অন্য কোন কাজে তারা আগ্রহী থাকে না।

বড় প্রকল্পের ঠিকাদার: 

ঠিকাদার ব্যবসার মধ্যে অন্যতম ঠিকাদার ব্যবসা হল বিভিন্ন বড় প্রকল্পের ঠিকাদারি ব্যবসা। তাদের কাজগুলো অনেক বড় ধরনের হয় থাকে। তারা ছোট ছোট প্রকল্পের কাজগুলো গ্রহণ করে না তারা মূলত বড় ধরনের কাজ গ্রহণ করে থাকে।  যেমন মেট্রোরেল, বিমানবন্দর ইত্যাদি বড় বড় প্রকল্প তারা বাস্তবায়ন করেন।

ঠিকাদার ব্যবসা করতে হলে যে সকল যোগ্যতার প্রয়োজন

১) লাইসেন্স সকল ব্যবসার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি পত্র। ঠিকাদারী ব্যবসা করতে হলে আপনার একটি প্রতিষ্ঠান থাকতে হবে এবং উক্ত প্রতিষ্ঠানের হালনাগাদ ট্রেন্ড লাইসেন্স রাখতে হবে। লাইসেন্স ছাড়া এ ধরনের ব্যবসা করা অনেক ঝুঁকিপূর্ণ।

 

২) আয়কর ও ভ্যাট প্রদানের সনদপত্র অবশ্যই থাকতে হবে। এই বার্ষিক আয়কর ও ভ্যাট প্রদানের সনদপত্র ছাড়া ঠিকাদারি ব্যবসা করা যাবে না।

 

৩) একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে। উক্ত একাউন্টের বিপরীতে আপনার লেনদেনের ব্যাংক সন্তুষ্ট মর্মের ব্যাংক কর্তৃক প্রদত্ত প্রত্যয়ন পত্র বা ব্যাংক সলভেন্সি সংগ্রহ করে টেন্ডারের এর সাথে জমা দিতে হবে। অন্যতায় আপনি ব্যবসাটি সঠিকভাবে করতে পারবেন না।

 

৪) সর্বশেষ অবশ্যই জাতীয় পরিচয় পত্র থাকতে হবে। জাতীয় পরিচয় পত্র হচ্ছে প্রত্যেকটি কাজের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি পত্র।

 

উপরোক্ত যে যে ডকুমেন্টের কথা বলা হয়েছে এই ডকুমেন্টগুলোর কপি থাকলেই আপনি ঠিকাদারি ব্যবসা সহজেই করতে পারবেন। এবং খুব সহজেই টিকাদারি ব্যবসায় সফলতা অর্জন করতে পারবেন।

ট্রেড লাইসেন্স

ট্রেড লাইসেন্স প্রত্যেকটি ব্যবসার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি পত্র। ট্রেড লাইসেন্স করতে অবশ্যই একটি নির্দিষ্ট ফি দিতে হয়। এই ফি নির্ধারিত হয় ব্যবসা বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ধরন অনুযায়ী। বর্তমান সময়ে ব্যবসার ধরন বুঝে লাইসেন্স ফি নির্ধারণ করা হয়। উক্ত লাইসেন্সের ফি ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভার সর্বনিম্ন ২০০ টাকা থেকে ২৬ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।

এক কথায় বলতে গেলে ট্রেড লাইসেন্স মানে ব্যবসার অনুমতি পত্র। ট্রেড লাইসেন্স ব্যতীত যেকোন ব্যবসা করা অনেক ক্ষতিকর এবং ঝুঁকিপূর্ণ। ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা এবং সিটি কর্পোরেশন অফিস থেকে ট্রেড লাইসেন্স অবশ্যই সংগ্রহ করতে হবে।

কোথা থেকে সংগ্রহ করবেন এটি নির্ভর করছে আপনি কোথায় অবস্থান করেন। আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অবস্থান কোথায়, তার উপর ভিত্তি করে আপনি নির্দিষ্ট জায়গা থেকে ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করতে পারবেন।

আপনার যদি কোন দোকান বা প্রতিষ্ঠান থেকে থাকে। তাহলে আপনি এই বিষয়টা সহজেই বুঝতে পারবেন এবং এ বিষয়ে আপনার একটু হলেও ধারণা রয়েছে। আপনার ব্যবসায়ের বার্ষিক আয় অবশ্যই নির্ভর করবে আপনার ব্যবসায়ের উপর। আপনি যদি সঠিক নিয়ম মাফিক ব্যবসাটি পরিচালনা করতে পারেন তাহলে অবশ্যই আপনি সফলতা অর্জন করবেন। এবং আপনার প্রত্যাশা মাফিক লাভ পাবেন।

কিভাবে আবেদন বা কাজ পাওয়া যাবে

বিজ্ঞাপন অনুসারে বিজ্ঞাপনে বর্ণিত স্থান থেকে দরপত্র বা সিডিউল কিনতে হবে। যা ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। দরপত্রে উল্লেখিত চাহিদা মোতাবেক সকল তথ্যাদি পূরণ করে বিজ্ঞপ্তি ও দরপত্রের চাহিত বিভিন্ন কাগজপত্র যেমন প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স, আয়কর ও ভেট প্রদান সনদ, ব্যাংক সলভেন্সি, জাতীয় পরিচয় পত্র এবং কিছু ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা এবং তালিকাভুক্তি (নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠানের তালিকাভুক্তির সনদ) সনদসহ টেন্ডার জমা দানের বক্সে জমা দিতে হবে।

পরবর্তীতে নির্ধারিত তারিখে টেন্ডার কমিটি কর্তৃক বক্স খোলা হবে এবং জমা প্রদানকারসহ ঠিকাদারগণের দরপত্র যাচাই-বাছাই করে কোন একজনকে ওয়ার্ক অর্ডার বা কাজ সম্পাদনের নির্দেশ দেওয়া হবে। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান কাজ শুরুর পূর্বে অর্ধেক বা পুরো মূল্য পরিশোধ করে থাকে আবার কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান সম্পন্ন কাজ বুঝে নিয়ে টাকা পরিশোধ করে থাকে।

ঠিকাদারি ব্যবসার গুরুত্বপূর্ণ দিক

ঠিকাদার ব্যবসা হল অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং একটি ব্যবসা। সুতরাং এই ব্যবসার চ্যালেঞ্জগুলো আপনাকে মোকাবেলা করতে হবে। অবশ্যই খুবই মাথা খাটিয়ে এই চ্যালেঞ্জগুলো গ্রহণ করতে হবে।

প্রতিযোগিতা

ইতিমধ্যে আমরা জেনেছি যে ঠিকাদারি ব্যবসা হল অন্যতম একটি প্রতিযোগিতামূলক একটি ব্যবসা। এই ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতার সংখ্যা অনেক বেশি হয়ে থাকে। সুতরাং আপনার নিজের অস্তিত্ব বজায় রাখতে হবে বুঝেশুনে এগিয়ে যেতে হবে।

বাজারের অস্থিরতা

আমাদের দেশের সবকিছুর দাম উটানামা করে থাকে। বাজারের বিভিন্ন ধরনের পণ্য সামগ্রী দাম কম বেশি চাহিদা এবং মূল্য উঠানামা করে। তাই বাজারের মূল্যের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। এবং সেই অনুযায়ী প্রদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা

ঠিকাদারী ব্যবসায়ীদের মধ্যে সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই এই কাজের ক্ষেত্রে সময় মেনটেন করে চলতে হয়।  ঠিকাদারি ব্যবসায়ে অন্যতম দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আপনার প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে।

কাজের মাল

আপনি যে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে হাত দিবেন সেখানে আপনার কাজের মান নিশ্চিত করতে হবে। এবং সেই অনুযায়ী কাজ চালিয়ে যেতে হবে।

১) ঠিকাদারি লাইসেন্স করতে কত টাকা লাগে?

  • গণপূর্ত অধিদপ্তরের ঠিকাদারি লাইসেন্সের আবেদনের ফিশ বাবদ 500 টাকা অনলাইনের মাধ্যমে জমা প্রদান করতে হয়।

২) ঠিকাদারী ব্যবসা কি হালাল?

  • ঠিকাদারী পেশা একটি হালাল ব্যবসা। তবে আমাদের দেশে এই পেশাটি নানা প্রশ্নবাদে জর্জরিত। কারণ আমরা প্রায় দেখি সরকারি বিল্ডিং ও রাস্তা কনস্ট্রাকশনে প্রচন্ডভাবে দুর্নীতি করা হয়। খুবই সামান্য খরচ করে বিল দেখানো হয় অনেক টাকা।

৩) ঠিকাদারের কাজ কি?

  • একজন সাধারন ঠিকাদার হলো একজন নির্মাণ ব্যবস্থাপক। যিনি একজন ক্লায়েন্ট দ্বারা নিযুক্ত হন। সাধারণত প্রকল্পের স্থপতি বা প্রকৌশলীর পরামর্শে নিযুক্ত হয়ে থাকেন। সাধারণ ঠিকাদার একটি প্রকল্পের সামগ্রিক সকল বিষয়ে জন্য দায়ী এবং তারা বিল্ডিং ডিজাইনার এবং নির্মাণ ফরম্যান।

৪) ঠিকাদার বলতে কি বুঝায়?

  • ঠিকাদাররা ক্লায়েন্টের কর্মচারী নন বরং একটি নির্দিষ্ট কাজ বা প্রকল্প সম্পন্ন করার জন্য একটি চুক্তিভিত্তিক চুক্তির মাধ্যমে নিয়োগ করা হয়। ঠিকাদারদের স্বল্প মেয়াদী বা দীর্ঘমেয়াদি কাজের জন্য নিয়োগ করা যেতে পারে। এবং একটি প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় একটি নির্দিষ্ট দক্ষতা বা দক্ষতার জন্য নিয়োগ করা যেতে পারে।

৫) ট্রেড লাইসেন্স করতে কত টাকা লাগে?

  • ট্রেড লাইসেন্স করতে অবশ্যই একটি নির্দিষ্ট ফি দিতে হয়। এই ফি নির্ধারিত হয় ব্যবসা বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ধরন অনুযায়ী। বর্তমান সময়ে ব্যবসার ধরন বুঝে লাইসেন্স ফি নির্ধারণ করা হয়। উক্ত লাইসেন্সের ফি ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভার সর্বনিম্ন ২০০ টাকা থেকে ২৬ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে ।

 

শেষকথা,উপরের ঠিকাদারি ব্যবসা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। উপরোক্ত বিষয়গুলো মনোযোগ সহকারে পড়লে এবং সেই অনুযায়ী কাজ করলে আপনি ঠিকাদারী ব্যবসায় সফলতা অর্জন করতে পারবেন। আশা করি আপনি একটু হলেও উপকৃত হবেন। এতক্ষণ মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য, ধন্যবাদ।

Sharing Is Caring:

Leave a Comment