ধানের স্টক ব্যবসা করার নিয়ম সম্পর্কে আপনি কি জানতে চান? তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। আমাদের দেশ হলো কৃষি প্রধান দেশ। আর কৃষি প্রধান খাদ্য হিসেবে ধান হল জনপ্রিয় খাদ্য। এ দেশে ধানের পর্যাপ্ত পরিমাণ চাহিদা রয়েছে। কেননা এই ধান থেকে চাল তৈরি হয়। এরপর চাল থেকে ভাত তৈরি হয়। আর আমাদের দেশের প্রায় সকলেই ভাতের উপর নির্ভরশীল।
ধানের স্টক ব্যবসায় প্রচুর পরিমাণ লাভ রয়েছে। যদি আপনি নিয়ম মেনে এই ব্যবসা করতে পারেন তাহলে কখনো লসের স্বীকার হবেন না। তাই আজ আমি ধানের স্টক ক ব্যবসা করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব। পাশাপাশি নানান খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। যাতে করে খুব সহজে আপনি ধানের স্টক ব্যবসায় লাভবান হতে পারেন। চলুন শুরু করা যাক।
ধানের স্টক ব্যবসা কেন করবেন
ধান হলো জনপ্রিয় একটি খাদ্য। এই ধান থেকে তৈরি করা হয় চাল। আর চাল থেকে তৈরি করা হয় ভাত। আর আমরা বাঙালিরা ভাত খেতে পছন্দ করি। তাহলে বুঝতেই পারছেন ধানের চাহিদা অনেক বেশি।
আর এর চাহিদা কখনো কমবে না বরং দিনে দিনে আরও বাড়তে থাকবে। তাই আপনি এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে ধানের ব্যবসা শুরু করে দিতে পারেন।
ধান কোথা থেকে ক্রয় করব
ধান ক্রয় করার দুইটি জায়গা রয়েছে।
১. সরাসরি বাজার থেকে: বিভিন্ন গ্রাম অঞ্চলের বাজারে ধান বিক্রি করা হয়। সেখান থেকে আপনি অভিজ্ঞ লোকের মাধ্যমে দেখেশুনে ভালো ধান ক্রয় করতে পারেন। কখনোই ভেজা ধান ক্রয় করবেন না। এতে করে পরবর্তীতে ওজন কমে যাবে এবং নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।
২. সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে: আপনি ইচ্ছা করলে বাজার থেকে ক্রয় না করে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয় করতে পারেন। বাজার থেকে ক্রয় না করে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ক্রয় করলে বাজারের বিক্রয় মূল্য অনুযায়ী তারা হয়তো একটু কমও রাখতে পারে।
ধানের স্টক ব্যবসা শুরু করার পূর্বে জরুরী বিষয়গুলো
প্রথমে ধানের এই স্টক ব্যবসা শুরু করার পূর্বে যেসব বিষয়গুলো খুব ভালো করে জানা জরুরী। সেগুলো নিম্নে বিস্তারিতভাবে জানানো হলো:
১.বাজার গবেষণা
ব্যবসায় লাভবান হওয়ার অন্যতম একটি টিপস হলো ব্যবসার শুরু করার পূর্বে বাজার গবেষণা করা। আপনি যেহেতু ধানের এই স্টক ব্যবসা করবেন, সুতরাং আপনার জন্য ধানের বাজার নিয়ে গবেষণা করতে হবে।
যেমন, বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের অনেক প্রজাতির ধান চাষ করা হয় থাকে। কোন সিজনে কোন ধান চাষ করা হয় এবং কোন ধানের দাম কেমন থাকে এবং সাধারণ মানুষের মাঝে কোন ধরনের ধানের চালের চাহিদা বেশি। মূলত সারা বছরই ধানের চাহিদা সমান থাকে। তবে সবচেয়ে বেশি কোন ধানের চাহিদা রয়েছে সেটা আপনাকে যাচাই করে বের করতে হবে।
২. অভিজ্ঞতা
ধানের স্টক ব্যবসা করতে হলে আপনার একটু অভিজ্ঞতা প্রয়োজন হবে। কখন কিভাবে ধান ক্রয় করতে হয় এবং কোন স্থান থেকে ধান ক্রয় করলে আপনি কম দামে ক্রয় করতে পারবেন এবং পরবর্তীতে বেশি পরিমাণে লাভবান হতে পারবেন। এজন্য আগে থেকে অভিজ্ঞতা থাকলে ভালো হয়।
এক্ষেত্রে আপনি যদি নতুন হন তাহলে ধানের এই স্টক ব্যবসার পূর্ব অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যবসায়ীদের সাথে যোগাযোগ করে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ নিতে পারেন।
৩. মূলধন
ধানের এই স্টক ব্যবসা করতে হলে আপনাকে মুলধনের প্রতি খুব বেশি লক্ষ্য করতে হবে। স্বাভাবিকভাবে একটু বেশি পরিমাণে মূলধনের প্রয়োজন হবে। আপনার যদি মূলধন কম থাকে তাহলে প্রয়োজনে আপনি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ব্যবসায়িক লোন নিতে পারেন।
৪. গোডাউন
ধানের স্টক ব্যবসা করতে হলে একটি গোডাউনের খুব প্রয়োজন। গোডাউন ছাড়া ধানের এই স্টক ব্যবসাটি করা সম্ভব নয়। আপনি ধানের সিজনে ধান ক্রয় করে স্টক করে রাখতে হলে একটি বড় ধরনের গোডাউন ভাড়া নিতে হবে এবং গোডাউন টি খুব মজবুত করে তৈরি করতে হবে।
৫.সংরক্ষণ
ধান ক্রয় করে স্টক করে রেখে দিলেই হবে না। বরং তা সংরক্ষণের জন্য আপনাকে সর্বক্ষণ পর্যবেক্ষণ করতে হবে। যাতে বৃষ্টির পানি পড়ে ধান নষ্ট না হয়ে যায়। এবং আরো আনুষঙ্গিক বিষয় খেয়াল করে খুব ভালোভাবে সংরক্ষণ করে রাখতে হবে।
ধান স্টকে রাখার প্রক্রিয়া
ধান স্টকে রাখার প্রক্রিয়া অর্থাৎ ধান ক্রয় করার পর সঙ্গে সঙ্গে বিক্রি না করে ধান মজুদ করে রাখতে পারেন। এরপর সুযোগ বুঝে যখন দাম বাড়বে তখন মজুদ করা ধানগুলো বিক্রি করে ফেলবেন। এভাবে স্টকে রেখে ধান বিক্রি করলে প্রচুর লাভবান হতে পারবেন।
ধান স্টকে রাখার ক্ষেত্রে কি কি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে
সাবধানতা অবলম্বন না করার কারণে বর্তমানে সময়ে স্টকে রাখা ধানগুলো প্রচুর নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাই অবশ্যই কয়েকটি বিষয়ে চোখের রাখার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
- শুকনা ধান ক্রয় করবেন। যদি সম্ভব হয় ধান ক্রয় করার পর রোদে শুকিয়ে নেবেন।
- ধান রাখার জন্য এমন একটি গুদাম বা গোডাউনের ব্যবস্থা করবেন যেখানে বন্যার পানি বা বৃষ্টির পানি স্পর্শ না করে।
- গুদাম সবসময় পরিষ্কার এবং শুকনো রাখবেন।
- বিশেষ করে খেয়াল রাখতে হবে ইদুর যেন ধান কোনভাবে নষ্ট করতে না পারে।
অবশ্যই এই সমস্ত বিষয়গুলো ফলো করবেন। এ সমস্ত বিষয়গুলো ফলো করলে আশা করি আপনার মজুদ করা ধানগুলো নষ্ট হবে না।
ধান বাজারজাতকরণ
ধান স্ট্রোকে রাখার পর বাজারজাতকরণ অবশ্যই জরুরি। এবং ধান স্টকে রাখার পর কিভাবে বাজারজাত করবেন। যেমন_
১) মিলের সাথে চুক্তি
আপনি পূর্ব থেকে বিভিন্ন চালের মিলের সাথে যোগাযোগ করে রাখতে পারেন। তাহলে আপনি তাদের থেকে আর্থিক সহায়তা পাবেন। অতঃপর যখন ধানের দাম বৃদ্ধি হবে তখন আপনি সরাসরি তাদের কাছে বিক্রি করতে পারবেন।
২. অন্য ধান ব্যবসায়ীদের কাছে
ধানের সিজন চলে যাওয়ার পর যখন দাম বৃদ্ধি পাবে তখন আপনার স্টকে থাকা ধানগুলো অন্য ধান ব্যবসায়ীদের কাছেও বিক্রি করতে পারেন।
তবে ধান বাজারজাত করার ক্ষেত্রে ধানের দামের প্রতি সজাগ সৃষ্টি রাখবেন। যখন দেখবেন ধানের দাম উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে তখনই বিক্রি করে দেবেন। এজন্য আপনাকে ধানের বাজারের দাম সম্পর্কে সব সময় অবগত থাকতে হবে।
স্টকে রাখা ধান কখন বিক্রি করব
ধান বিক্রি করার নির্দিষ্ট কোন সময় নাই। যখন দেখবেন ধানের দাম বেড়ে গেছে তখন ঐ স্টকে রাখা ধানগুলো বিক্রি করে দিতে হবে। এজন্য সব সময় আপনাকে ধানের মার্কেটপ্লেস এ খেয়াল রাখতে হবে। যখন সুযোগ পাবেন তখন ওই বিক্রি করে ফেলবেন। এক্ষেত্রে বিলম্ব করবেন না।
উদাহরণস্বরূপ: ধান ক্রয় করা থেকে স্টকে রাখা পর্যন্ত যত টাকা খরচ হয়েছে তা বাদ দিয়ে যদি প্রতি মনে ১০০ থেকে ২০০ টাকা লাভ হয় তাহলে আপনি বিক্রি করে ফেলবেন।
ধান থেকে চাউল তৈরি করে বিক্রি করা
ধান থেকে চাল তৈরি করে অনেক লাভে বিক্রি করতে পারবেন। এক্ষেত্রে পরিশ্রম একটু বেশি হবে তবে মুনাফা পরিমানে বেশি পাবেন। ধন থেকে চাল তৈরি করলে দুইটি লাভ।
- প্রথম হচ্ছে আপনি চাল পাচ্ছেন।
- দ্বিতীয়ত হচ্ছে আপনি কুড়া পাচ্ছেন।
চালের সাথে সাথে আপনি চাইলে সেই কুড়াও বিক্রি করতে পারবেন।
ধান থেকে চাল তৈরি করার প্রক্রিয়া
ধান থেকে চাল তৈরি করা খুবই সহজ। সর্বপ্রথম আপনাকে ধান সিদ্ধ করতে হবে। তারপর রোদে শুকাতে হবে। তারপর ধান ভাঙ্গাতে হবে। ভাঙ্গানোর পরেই চাল তৈরি হয়ে যাবে। এভাবে খুব সহজেই চাল তৈরি হয়ে যাবে। চালের চাহিদা ধানের থেকে বেশি। তাই এ ব্যবসা করে খুব সহজেই সফলতা অর্জন করতে পারেন।
পরিশেষে
উপরে ধানের স্টক ব্যবসা আইডিয়া সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো। এই স্টক ব্যবসা খুবই লাভজনক একটি ব্যবসা। যদি উপরের বিষয়গুলো ফলো করেন তাহলে খুব সহজেই সফলতা অর্জন করতে পারবেন। আশা করছি আমাদের আজকের এই আর্টিকেল আপনার উপকারে আসবে। ধন্যবাদ।