মসলার ব্যবসা আইডিয়া: কম পুঁজি দিয়ে সফল ব্যবসা শুরু করার চমৎকার উপায়!

মসলার ব্যবসা করার ইচ্ছা থাকলে, অবশ্যই আপনাকে মশলা ব্যবসা করার নিয়ম কানুন জানা থাকা লাগবে। অনেকে অবশ্য গুড়া মসলার ব্যবসা করার চিন্তা করেছেন। মসলা প্রতিটি ঘরে ঘরে প্রয়োজন। মসলা বাঙালি মানুষের সারা জীবনের বন্ধু। আমাদের প্রতিদিন রান্নার কাজে এ মসলা ব্যবহার করতে হয়।

বাংলাদেশের যে পরিমাণ মশলার ব্যবহার হয় তা পৃথিবীর আর কোন দেশে ব্যবহার হয় কিনা সন্দেহ। মরিচ গুঁড়া, হলুদ গুঁড়া, দুনিয়ার গুড়া, জিরা গুড়া ইত্যাদি আমরা প্রতিদিনই ব্যবহার করি। এর জন্য মশলা অনেক বেশি পরিমাণে তৈরি করতে হয়। আপনি কি মশলার ব্যবসা করতে চাচ্ছেন? বুঝতে পারছি না কিভাবে ব্যবসা শুরু করবেন? যেহেতু বাংলাদেশের প্রচুর পরিমাণে মশলার প্রয়োজন হয়, সেজন্য আপনি যদি সঠিক নিয়মে ব্যবসা শুরু করেন তাহলে অবশ্যই লাভবান হবেন। মসলার ব্যবসা শুরু করার আগে আপনাকে কিছু নিয়মকানুন মেনে তারপর ব্যবসা শুরু করতে হবে।

মসলার পাইকারি ব্যবসা

মশলা ব্যবসা একটি চাহিদাসম্পন্ন এবং লাভজনক ব্যবসা। বাংলাদেশ, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে মশলার বিশাল বাজার রয়েছে। বিশেষ করে জিরা, হলুদ, শুকনা মরিচের চাহিদা সারা বছর ধরে থাকে। এই ব্যবসায় লাভজনক হওয়ার কয়েকটি প্রধান কারণ:

চাহিদা সর্বদা থাকে: মশলা রান্নার অপরিহার্য উপাদান, তাই বাজারে এর চাহিদা কখনো কমে না।

পাইকারি ক্রয়ের সুবিধা: পাইকারি দামে মশলা কিনে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করলে ভালো লাভ করা যায়।

রপ্তানির সুযোগ: বাংলাদেশ থেকে ভারতে, মধ্যপ্রাচ্যে ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে মশলা রপ্তানি করা হয়, যা আরও বড় লাভের সম্ভাবনা তৈরি করে।

কম বিনিয়োগে বড় মুনাফা: অন্যান্য ব্যবসার তুলনায় মশলা ব্যবসায় তুলনামূলক কম বিনিয়োগে ভালো লাভ করা সম্ভব।

জিরার ব্যবসা

দুই ধরনের জিরা পাওয়া যায়। একটি হচ্ছে কালোজিরা এবং অন্যটি সাদা জিরা। আপনি চাইলে কালো বা সাদা যেকোন একটি জিরার ব্যবসা শুরু করতে পারেন। তবে সাদা জিরার থেকে কালোজিরার চাহিদা বেশি। আপনি ব্যবসা পাইকারি বা খুচরা যে কোন একটি ব্যবসা করতে পারেন।

প্রথমে একটি ভালো মানের দোকান নিতে হবে এবং অবশ্যই ভালো একটা পজিশনে থাকতে হবে। আপনি যেহেতু জিরার ব্যবসা করছেন তাহলে প্রথমত আপনি একটি ডিসপ্লে করবেন সেটা হচ্ছে শুধুমাত্র জিরার। যেহেতু আপনি শুধুমাত্র জিরার ব্যবসা করবেন। আপনি কয়েক জাতের জিরা দোকানে এনে রাখবেন। প্রথমত আপনি ২০ হাজার ৩০ হাজার টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করতে পারেন। পরে আস্তে আস্তে ব্যবসা বড় করতে পারেন।

হলুদ মরিচের ব্যবসা

হলুদ মরিচের ব্যবসা শুরু করার জন্য। প্রথমে আপনাকে হলুদ এবং মরিচ ভাঙ্গানোর জন্য একটি মেশিন কিনতে হবে। সাহিত্য থেকে ৬৫ হাজার টাকা দিয়ে মেশিনটি কিনতে পারেন। মেশিনটি দিয়ে প্রতি ঘন্টায় ৬৫ কেজি হলুদ ভাঙ্গাতে পারবেন। আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে প্যাকিং মেশিন, মেশিন স্থাপনা, কাঁচামাল সংগ্রহ ইত্যাদি।

প্রতি কেজি মরিচ এবং হলুদের দাম ১০০ টাকা হলে, আপনি গুরা হলুদ এবং মরিচ বিক্রি করতে পারবেন ২০০ টাকা কেজি। যদি প্যাকিং খরচ প্রতি কেজিতে ২০ টাকা ধরেন তাহলে ৮০ টাকা কেজি প্রতি লাভ করতে পারেন।

শুকনা মরিচের স্টক ব্যবসা

শুকনা মরিচের স্টক ব্যবসা শুরু করতে হলে আপনাকে যে বিষয়গুলো জানা থাকতে হবে। শুকনা মরিচের এই স্টক ব্যবসা শুরু করার আগে আপনাকে বাজার গবেষণা করতে হবে। আপনার কাছে কি পরিমান মূলধন রয়েছে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। পন্যের গুণগত মান বিচার করতে হবে। অনেক সময় শুকনা মরিচে পোকামাকড় দেখা যায়।

তাই সঠিক পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করতে হবে। আমাদের দেশের সাধারণতো কয়েক জাতের শুকনা মরিচ পাওয়া যায়। এখানে আপনাকে খুঁজে বের করতে হবে কোন জাতের মরিচের চাহিদা বেশি। সাথে আপনার শুকনা মরিচের ব্যবসায় আপনার প্রতিযোগী কারা এসব বিষয়ে আপনাকে বাজার গবেষণা করে বের করতে হবে।

ব্যবসা শুরু করার জন্য ৪টি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ

১. মসলা গুড়া করার মেশিন এবং ব্যবসার নাম ঠিক করা

মশলার ব্যবসা শুরু করার আগে আপনাকে মসলা গুড়া করার জন্য মেশিন কিনতে হবে। মেশিন ছাড়া আপনি মশলা গুড়া করতে পারবেন না, অতএব আপনি ব্যবসা শুরু করতে পারবেন। মশলা গুড়া করার মেশিনের দাম নির্ভর করে তার স্পিড এবং ক্যাপাসিটি এর উপর।

২. ম্যাটেরিয়াল সংগ্রহ করা

মেশিনের ব্যবস্থা করার পর আপনার দরকার হবে ম্যাটারিয়াল, যা দিয়ে আপনি মশলা তৈরি করবেন। মেটারিয়াল না থাকলে মেশিন দিয়ে কোন লাভ হবে না তাই সর্বপ্রথম আপনাকে মেশিন এবং ম্যাটারিয়াল জোগাড় করতে হবে। আপনি যে যে মশলা গুরু করে বিক্রি করতে চান সেগুলো মেটেরিয়াল আপনাকে কিনতে হবে। যেমন

  • কাঁচা হলুদ
  • শুকনা মরিচ
  • জিরা

৩. মশলার কোম্পানির নামে প্যাকেট তৈরি করা

অবশ্যই আপনি যখন ব্যবসা শুরু করবেন তখন আপনি আপনার ব্যবসার নাম দিবেন। যাতে এই নাম ব্যবহার করে আপনি ব্যবসা পরিচালিত করতে পারেন। আপনি কোম্পানির নাম দিয়ে প্যাকেট তৈরি করতে পারেন। কোম্পানির নাম দিয়ে প্যাকেট তৈরি করলে আপনার কোম্পানির প্রচার হবে এবং গ্রাহকরা সহজেই আপনার মশলা বাজারে খুঁজে বের করতে পারবে।

প্যাকেট তৈরি করার সময় মনে রাখতে হবে

🔶 প্যাকেট আকর্ষণীয় হতে হবে

🔶 কোম্পানি বা ব্র্যান্ডের নাম স্পষ্ট হতে হবে

🔶 মশলা তৈরির উপকরণ লেখা থাকতে হবে

মশলার পাইকারি বাজার কোথায়

নিচে কয়েকটি বিখ্যাত বাজারের কথা বলব যে বাজারগুলো দেখে ঘুরে আসলে অবশ্যই আপনি একটু ভালো ধারণা পাবেন এবং পাইকার হিসেবে কিনতে পারবেন এই মসলাগুলো।

🔸পুরান ঢাকায় অবস্থিত ঢাকার মৌলভীবাজার। এখান থেকে আপনি সম্পূর্ণ পাইকারিতে মসলা কিনতে পারবেন। বিশেষ করে ইরানি মসলা এবং ভারতীয়সহ মিডিলইস্ট সকল মসলা পাবেন এখানে সম্পূর্ণ পাইকারি দামে।

🔸দ্বিতীয় হচ্ছে কাওরান বাজার। কাওরান বাজার থেকে মূলত সারা বাংলাদেশের পাইকারি মসলা কিনে থাকে। দেশি-বিদেশি সকল মসলা এখানে পাইকারি দামে পাওয়া যায়।

🔸আরেকটি হচ্ছে যাত্রাবাড়ী। এখান থেকে আপনি পাইকারি দামে মসলাগুলো পাবেন। পাইকারি দামে কিনে আপনি নিজ এলাকার বিজনেস করতে পারেন।

মসলা ব্যবসায় কতটা লাভজনক

আপনি ৫০,০০০ টাকা থেকে শুরু করে ১০,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত যেকোনো পরিমাণ টাকা নিয়ে ব্যবসা শুরু করতে পারবেন। আপনার মুনাফা নির্ভর করে আপনি কি পরিমান পণ্য নিয়ে ব্যবসা শুরু করতে চাচ্ছেন। এবং আপনার মূলধনের ওপর কিন্তু আপনার ব্যবসায়ের লাভ নির্ভর করে। আপনি যত বড় ব্যবসা করবেন আপনার লাভও তত বেশি হবে।

যদি আপনি একটি মসলা নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন তাহলে আপনার খরচ কম পড়বে এবং আপনি যদি অনেক ধরনের মসলা নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন তাহলে আপনার খরচ যেমন বেশি পড়বে লাভও তেমন বেশি হবে।

ব্যবসায় লাভ কেমন

মসলার ব্যবসায়ের অবশ্যই লাভ রয়েছে। প্রথমত আপনার ব্যবসায়ের মূলধনের উপর আপনার ব্যবসায়ের লাভ নির্ভর। যেমন ধরেন ৩০ কেজি গুড়া মশলা থেকে ৯,০০০ টাকা আয় করা সম্ভব।

মশলা ব্যবসায় সাধারণত মানুষের করা কিছু প্রশ্ন ও উত্তর

১. মশলার পাইকারি ব্যবসা শুরু করতে কী পরিমাণ বিনিয়োগ লাগবে?

  • এটি নির্ভর করে ব্যবসার পরিসরের ওপর। সাধারণত ৫০,০০০ থেকে ৫,০০,০০০ টাকার মধ্যে বিনিয়োগ করে একটি ছোট বা মাঝারি পাইকারি ব্যবসা শুরু করা যায়।

২. কোথা থেকে ভালো মানের মশলা সংগ্রহ করা যায়?

  • স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি সংগ্রহ করা যায়, অথবা বড় পাইকারি বাজার থেকে কিনতে পারেন।

৩. মশলা ব্যবসার জন্য লাইসেন্স দরকার কি?

  • হ্যাঁ, ব্যবসা বৈধভাবে চালানোর জন্য ট্রেড লাইসেন্স এবং বিএসটিআই অনুমোদন নেওয়া উচিত।

৪. মশলার ব্যবসার জন্য কোন সিজন বেশি লাভজনক?

  • সাধারণত ঈদ, পূজা এবং অন্যান্য উৎসবের সময় মশলার চাহিদা বেড়ে যায়।

৫. মশলা কতদিন ভালো রাখা যায়?

  • সঠিক সংরক্ষণ পদ্ধতি অনুসরণ করলে ৬ মাস থেকে ১ বছর পর্যন্ত মশলা ভালো রাখা যায়।

পরিশেষে

মসলার ব্যবসা অনেক লাভজনক একটি ব্যবসা হতে পারে। যদি আপনি নিয়ম কানুন মেনে চলেন এবং মসলায় কোন রকমের ভেজাল ব্যবহার না করেন।

মশলার পাইকারি ব্যবসা বাংলাদেশে অত্যন্ত লাভজনক হতে পারে যদি সঠিক পরিকল্পনা এবং কৌশল অনুসরণ করা হয়।

ভালো মানের মশলা সংগ্রহ, বাজার গবেষণা, অনলাইন এবং অফলাইন বিপণন কৌশল, এবং দক্ষ সরবরাহ ব্যবস্থার মাধ্যমে এই ব্যবসাকে আরও লাভজনক করা সম্ভব। মনে রাখতে হবে, যেকোনো ব্যবসার জন্য প্রয়োজন হয় পরিশ্রম এবং ধৈর্য। যদি আপনি এই ব্যবসায় নামতে চান, তাহলে এখনই পরিকল্পনা শুরু করুন এবং সফল ব্যবসায়ী হয়ে উঠুন!

Sharing Is Caring:

Leave a Comment