রমজানে ওমরাহ করার ফজিলত: পবিত্র মাসে ইবাদতের দ্বিগুণ সওয়াব পাওয়ার সুযোগ!

রমজান মাস হলো ইসলামের সবচেয়ে বরকতময় মাস। এই মাসে প্রতিটি নেক আমলের প্রতিদান বৃদ্ধি করা হয়। রমজানে ওমরাহ করার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে, কারণ এটি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দ্বারা বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়েছে। তিনি বলেছেন, “রমজানে ওমরাহ করা আমার সাথে হজ করার সমতুল্য।” (সহীহ বুখারী, হাদিস: ১৭৮২) এই হাদিস থেকেই বোঝা যায় যে রমজানে ওমরাহ পালন করলে একজন মুমিন অনেক সওয়াব অর্জন করতে পারেন। আজকের আলোচনার বিষয় হলো রমজানে ওমরাহ করার ফজিলত!

রমজান মাসে ওমরাহ পালনে বিশেষ সওয়াব

পবিত্র রমজান মাস সমাগত। এই মাসে সিয়ামের মাধ্যমে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের অসংখ্য নিয়ামত দান করেন, তাদের গুনাহ ক্ষমা করেন এবং ইবাদতের প্রতিদান বহুগুণ বাড়িয়ে দেন। তাই প্রত্যেক মুমিনের উচিত, রমজানের ফজিলত অর্জনের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করা।

রমজানে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত রয়েছে, যা মুমিনদের অফুরন্ত সওয়াব অর্জনের সুযোগ করে দেয়। এটি হলো—ওমরাহ। যারা সামর্থ্যবান, তাদের জন্য এটি অত্যন্ত কল্যাণকর। কেননা হাদিসে বর্ণিত আছে, রমজানে ওমরাহ পালন করা হজের সমান সওয়াবের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) এক আনসারি নারীকে জিজ্ঞাসা করেন, হজে অংশগ্রহণ করতে তুমি কী কারণে অপারগ? ইবনে আব্বাস (রা.) ওই নারীর নাম উল্লেখ করেছিলেন, তবে সেটি ভুলে গিয়েছেন। উত্তরে সেই নারী বলেন, আমাদের একটি উট ছিল, যা পানি বহনের কাজে ব্যবহৃত হতো। তবে তা নিয়ে আমার স্বামী ও পুত্র চলে গেছেন। আমাদের জন্য আরেকটি উট রেখে গেছেন, যা দিয়ে আমরা পানি বহন করি। তখন নবী (সা.) বললেন, যখন রমজান আসবে, তখন ওমরাহ করো।

কারণ, রমজানে ওমরাহ করা হজের সমতুল্য সওয়াব অর্জনের সুযোগ দেয়। (বুখারি, হাদিস : ১৭৮২)

একটি বর্ণনায় পাওয়া যায়, নবীজি (সা.) বলেছেন, রমজানে ওমরাহ করলে তা আমার সঙ্গে হজ করার সমতুল্য হয়। কবুল হজ এমন একটি ইবাদত, যার একমাত্র প্রতিদান জান্নাত।

হাদিসে আরও এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা হজ ও ওমরাহ একসঙ্গে আদায় করো। কারণ, হজ ও ওমরাহ দারিদ্র্য ও গুনাহ দূর করে দেয়, যেমনভাবে আগুনে গলানোর মাধ্যমে ধাতুর ময়লা দূর হয়। আর একটি কবুল হজের প্রতিদান একমাত্র জান্নাত। (তিরমিজি, হাদিস : ৮১০)

তবে মনে রাখতে হবে, রমজানে ওমরাহ করলে হজের সওয়াব পাওয়া গেলেও, ফরজ হজ পালনের বাধ্যবাধকতা দূর হয় না। যাদের ওপর হজ ফরজ, তাদের অবশ্যই নির্দিষ্ট সময়ে তা আদায় করতে হবে। রমজানের ওমরাহ ফরজ হজের বিকল্প নয়।

রমজানে ওমরাহ করার বিশেষ ফজিলত

রমজানে ওমরাহ করার বিশেষ ফজিলত নিম্নে আলোচনা করা হলো:

১. হজের সমতুল্য সওয়াব

যারা হজ করার সুযোগ পান না, তাদের জন্য রমজানের ওমরাহ একটি বড় সুযোগ। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “রমজানের ওমরাহ হজের সমান।” এটি এমন একটি সুযোগ, যা মুমিনদের জন্য বিশেষভাবে বরকতময়।

২. গুনাহ মাফের সুযোগ

রমজান এমনিতেই গুনাহ মাফের মাস। এই মাসে ওমরাহ করলে গুনাহ মাফ হওয়ার সম্ভাবনা আরও বেশি। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, “যে ব্যক্তি একটি সৎকাজ করে, সে দশগুণ সওয়াব লাভ করে।” (সুরা আল-আন’আম: ১৬০)

৩. জান্নাতের পথ প্রশস্ত করা

ওমরাহ একজন মুসলিমের জন্য পবিত্র অভিজ্ঞতা। রমজানে এটি পালন করলে জান্নাতের পথে এগিয়ে যাওয়ার একটি সুবর্ণ সুযোগ লাভ হয়।

৪. দোয়া কবুলের বিশেষ মুহূর্ত

রমজান এমনিতেই দোয়া কবুলের মাস। এই সময় মক্কা শরিফে অবস্থান করলে দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা আরও বেড়ে যায়। বিশেষ করে, কাবা শরিফের সামনে দোয়া করলে আল্লাহর রহমত লাভ করা সহজ হয়।

৫. তাকওয়া ও আত্মশুদ্ধির সুযোগ

রমজান এবং ওমরাহ, দুটিই আত্মশুদ্ধির বড় মাধ্যম। ওমরাহ পালনের মাধ্যমে একজন মুমিন নিজের ঈমানকে আরও দৃঢ় করতে পারেন। এ সময় বেশি বেশি ইবাদত করলে আত্মার পরিশুদ্ধি হয়।

৬. লাইলাতুল কদরের সওয়াব লাভের সম্ভাবনা

রমজানের শেষ দশ দিনে ওমরাহ করলে লাইলাতুল কদর পাওয়ার সুযোগ থাকে। এটি হাজার মাসের ইবাদতের সমান।

রমজানে ওমরাহ পালনের প্রস্তুতি

রমজানে ওমরাহ করতে চাইলে কিছু প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি:

  • মানসিক ও শারীরিক প্রস্তুতি: দীর্ঘ সময় রোজা রেখে ওমরাহ করা কষ্টকর হতে পারে। তাই আগে থেকেই শরীর ও মন প্রস্তুত করতে হবে।
  • ভিসা ও অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা: সৌদি আরবে যাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত পরিকল্পনা ও ভিসার ব্যবস্থা করতে হবে।
  • সঠিক সময় নির্বাচন: রমজানের শেষ দশ দিন ওমরাহ করার জন্য সবচেয়ে উত্তম সময়।
  • পর্যাপ্ত ইবাদত: শুধু তাওয়াফ ও সাঈ নয়, বরং নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত এবং দোয়ার প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে।

উপসংহার

রমজানে ওমরাহ করা এক বিশেষ সৌভাগ্যের ব্যাপার। এটি হজের সমান সওয়াব এনে দেয় এবং আত্মশুদ্ধির জন্য একটি চমৎকার সুযোগ। এই মাসে ওমরাহ করলে আল্লাহর বিশেষ রহমত লাভ করা যায়, গুনাহ মাফ হয় এবং জান্নাতের পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া যায়। তাই যারা সামর্থ্যবান, তাদের উচিত এই পবিত্র মাসে ওমরাহ করার চেষ্টা করা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই মহিমান্বিত ইবাদতের তৌফিক দান করুন। আমিন।

 

Sharing Is Caring:

Leave a Comment