হিজবুত তাহরীর কি? একটি বিস্তারিত পর্যালোচনা

হিজবুত তাহরীর (Hizb ut-Tahrir) একটি আন্তর্জাতিক ইসলামিক রাজনৈতিক সংগঠন যা মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ইসলামি খিলাফত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে। এই সংগঠনটি সশস্ত্র সংগ্রামের পরিবর্তে বুদ্ধিবৃত্তিক এবং রাজনৈতিক পদ্ধতিতে তাদের লক্ষ্য অর্জন করতে চায়। হিজবুত তাহরীরের কার্যক্রম, মতবাদ এবং বিতর্কিত কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে যেহেতু এটি কিছু দেশে নিষিদ্ধ হয়েছে এবং তার কিছু কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক আঙ্গিকে আলোচিত হয়।

হিজবুত তাহরীরের ইতিহাস

হিজবুত তাহরীর ১৯৫৩ সালে ফিলিস্তিনের জেরুজালেমে শায়েখ তাকিউদ্দীন আন-নাবহানী কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়। সংগঠনটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিভিন্ন দেশে তার শাখা বিস্তার করে এবং মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ইসলামী খিলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করতে থাকে। তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিলো মুসলিম রাষ্ট্রগুলির মধ্যে একক ইসলামি শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা।

বাংলাদেশে হিজবুত তাহরীরের প্রেক্ষাপট

বাংলাদেশে হিজবুত তাহরীরের কর্মকাণ্ড শুরু হয় ২০০০ সালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. সৈয়দ গোলাম মওলা লন্ডনে পড়াশোনার সময় সংগঠনটির সাথে পরিচিত হন এবং দেশে ফিরে এসে তারা ধানমন্ডিতে প্রথম শাখা প্রতিষ্ঠা করেন। তবে, বাংলাদেশ সরকার ২০০৯ সালে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ করে। এরপরও, তারা তাদের কার্যক্রম চালিয়ে গেছে এবং মসজিদের বাইরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে, পাশাপাশি অনলাইনে তাদের মতবাদ প্রচার করে।

হিজবুত তাহরীরের উদ্দেশ্য ও কার্যক্রম

হিজবুত তাহরীরের মূল লক্ষ্য হলো একটি ইসলামী খিলাফত প্রতিষ্ঠা করা। তারা বিশ্বাস করে যে, মুসলিম উম্মাহকে একটি একক শাসন ব্যবস্থায় ঐক্যবদ্ধ করা উচিত, যেখানে ইসলামী আইন (শরীয়াহ) কার্যকর হবে। তাদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য তারা শান্তিপূর্ণ উপায়ে বুদ্ধিবৃত্তিক ও রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। তবে, কিছু ক্ষেত্রে তাদের কর্মকাণ্ড বিতর্কিত হয়ে থাকে, যেমন ২০১৬ সালে মাদারীপুরে এক হিন্দু কলেজ শিক্ষককে হত্যার চেষ্টা এবং ২০১৪ সালে পুলিশ ও সংগঠনের সদস্যদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা।

কেন বাংলাদেশে হিজবুত তাহরীর নিষিদ্ধ হলো

হিজবুত তাহরীরকে নিষিদ্ধ করার পেছনে মূল কারণ হলো তাদের কার্যক্রমের সম্ভাব্য হুমকি এবং দেশের নিরাপত্তার প্রতি ঝুঁকি। বাংলাদেশ সরকার তাদের শান্তিপূর্ণ উপায়ে ইসলামী খিলাফত প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা থেকে জনগণের নিরাপত্তা এবং আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা করেছিলো। একাধিক বিতর্কিত কর্মকাণ্ড এবং সংঘর্ষের পর সরকার তাদের নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। তাদের অনলাইনে মতবাদ প্রচার এবং মসজিদের বাইরে বিক্ষোভ প্রদর্শন দেশীয় পরিস্থিতিতে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছিলো, যা সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করেছিল।

কেন হিজবুত তাহরীর খারাপ

হিজবুত তাহরীরের বিরুদ্ধে সমালোচনা অনেক কারণেই রয়েছে। প্রথমত, তারা ইসলামী খিলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য রাজনৈতিকভাবে সক্রিয়, যা কিছু দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করে। দ্বিতীয়ত, তাদের কার্যক্রম দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিপর্যস্ত করতে পারে এবং জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি ও অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে। তৃতীয়ত, শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলমান থাকলেও, তাদের কিছু কর্মকাণ্ড যেমন সহিংস সংঘর্ষ এবং হত্যার চেষ্টা তাদের সুনাম ক্ষুণ্ন করেছে। এসব কারণে অনেকেই মনে করেন, হিজবুত তাহরীর একটি বিপজ্জনক সংগঠন যা দেশ ও সমাজের শান্তি এবং নিরাপত্তার জন্য ক্ষতিকর।

শেষ কথা

হিজবুত তাহরীর একটি আন্তর্জাতিক ইসলামী রাজনৈতিক সংগঠন, যা ইসলামী খিলাফত প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করছে। বাংলাদেশে এই সংগঠনটি নিষিদ্ধ হলেও তাদের কার্যক্রম এখনও চলমান। তাদের শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পদ্ধতিতে কাজ করার প্রেক্ষাপটে, সরকার তাদের কর্মকাণ্ডে সযত্নে নজর রাখছে। হিজবুত তাহরীরের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সহযোগিতা করা অত্যন্ত জরুরি।

Sharing Is Caring:

Leave a Comment