পেঁয়াজের ব্যবসার লাভজনক আইডিয়া

দৈনন্দিন জীবনে যাই ঘটুক না কেন খেতে হবে। আর সেই কারণে যত বাধাই আসুক না কেন রান্না ঘরে পেঁয়াজের অভাব নেই। কারণ পেঁয়াজ ছাড়া তা একেবারেই অসম্পূর্ণ। অন্য সবজি না থাকলে কোন সমস্যা নেই, তবে পেঁয়াজ না থাকলে সেদিন রান্না করা সম্ভব নয়। পেঁয়াজ ছাড়া রান্না হয় না, পেঁয়াজ হচ্ছে রান্না সবচেয়ে প্রয়োজনীয় জিনিস।

পেঁয়াজের ব্যবসা হচ্ছে একটি কাঁচামালের ব্যবসা। এই ব্যবসার লাভ সাধারণত অনির্দিষ্ট। এ ব্যবসায় টাকা লাভ হবে না লোকসান হবে তা নির্দিষ্ট করে বুঝা যায় না। অথচ তার চারদিকের পরিস্থিতিও বুঝে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা হয়ে থাকে। এটা নির্দিষ্ট করে বলতে পারবে না কেউ। উৎপাদনের ওপর ভিত্তি করে বা বুঝে স্টার্ট করতে হয় পেঁয়াজের ব্যবসা। তবে আপনি যদি এটি অনুমান করতে পারেন এবং একবার ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন তাহলে আপনি হতে পারেন প্রচুর লাভবান।

আজকের আর্টিকেলটি আপনাকে কিভাবে পেঁয়াজের ব্যবসা শুরু করতে হবে এবং কিভাবে আপনি এটি সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে পারেন তার সমস্ত তথ্য দেয়া হবে।

পেঁয়াজের পাইকারি ব্যবসা ও বাজারের চাহিদা

আগেই বলা হয়েছে পেঁয়াজের চাহিদা নতুন কিছু নয়, পেঁয়াজ হচ্ছে রান্নার সবচেয়ে প্রয়োজনীয় একটি জিনিস। আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে এরকম ব্যবসায়ীকে খুব একটা পরিশ্রম করতে হয় না, কোথাও যাওয়ার প্রয়োজন হয় না।

একজন ব্যবসায়ী তার গুদামে প্রচুর পরিমাণে পেঁয়াজ রাখতে পারে এবং খুচরা বিক্রেতা সময় মতো পেঁয়াজ সরবরাহ করে থাকে।

কিভাবে পেঁয়াজের পাইকারি ব্যবসা শুরু করবেন

কেউ অনায়াসে একটু মাথা খাটিয়ে এই পেঁয়াজের ব্যবসা শুরু করতে পারে। তাছাড়া এই ব্যবসা শুরু করতে হলে প্রথমে একটি বড় গুদাম তৈরি করতে হবে। অথবা একটি বড় দোকান থাকতে হবে। এবং এই গুদাম বা দোকান এমন জায়গায় থাকা দরকার যেখানে লোকেরা সহজেই পৌঁছাতে পারে। এবং আপনি সহজেই এখানে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে পারেন, খেয়াল রাখতে হবে যাতে পেঁয়াজগুলোর সহজে পচার সম্ভাবনা না থাকে ‌।

এই পেঁয়াজ থেকে আপনি শুধু খুচরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে আয় করতে পারবেন না, বরং যে কোন বড় হোটেল ও রেস্তোরায় পাইকারি মূল্যের চেয়ে বেশি আয় করতে পারবেন। পেঁয়াজের পাইকারি ব্যবসায় আপনাকে বেশি বিনিয়োগ করতে হবে না। আপনি খুব কম স্টার্টআপ করেছে আপনার নিজের বাড়িতে ব্যবসা শুরু করতে পারেন। তাছাড়া এই ব্যবসাকে অধিক লাভজনক বলে মনে করা হয়। যেহেতু আপনি পাইকারি ব্যবসা হিসেবে ব্যবসাটি চালু করবেন। তাহলে আপনার মাথায় রাখতে হবে খুব সস্তা দামে খুচরা বিক্রেতাদের দিতে হবে। যার মাধ্যমে তারা কিছু লাভ রেখে তাদের ব্যবসাটি চালু করতে পারে।

ব্যবসার একটি ধারণা

ধরেন, পেঁয়াজ একটি ব্যবসার মাসে কুড়ি হাজার টাকা উপার্জন করতে ব্যবসায় কত টাকা বিনিয়োগ করতে হবে, তা নির্ভর করে অনেক কারণ এর উপর। যেমন পেঁয়াজের দরন, পেঁয়াজের পরিমাণ, পেঁয়াজ কেনার দাম, আজ বিক্রির দাম, ব্যবসার স্থান, ব্যবসার ধরন ইত্যাদি আপনার মাথায় রাখতে হবে।

সাধারণভাবে পেঁয়াজ ব্যবসায় মাসে কুড়ি হাজার টাকা উপার্জন করতে হলে কমপক্ষে পাঁচ লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে হবে ব্যবসায়। এরমধ্যে চার লাখ টাকা পেঁয়াজ কেনার জন্য, এবং বাকি ৫০ হাজার টাকা ব্যবসার স্থান ভাড়া এবং অন্যান্য খরচের জন্য।

যদি আপনি পেঁয়াজের গুণমান এবং পরিমাণ বাড়াতে চান, তাহলে আপনাকে আরো বেশি টাকা বিনিয়োগ করতে হবে এতে আপনার লাভের পরিমাণও বৃদ্ধি হবে।

এখানে একটি উদাহরণ দেওয়া হলো:-

ধরুন, আপনি প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৪০ টাকা দরে কিনেছেন। প্রতি কেজি পেয়াজ ৫০ টাকায় বিক্রি করেছেন। প্রতিমাসে ১০ টন পেঁয়াজ বিক্রি করেছেন। তাহলে আপনার মোট বিক্রি হবে ১০ টন পেঁয়াজ।

১০ টন পেঁয়াজ ৫০ টাকা বিক্রি করলে আপনার টাকা হবে পাঁচ লাখ। আপনার মোট লাভ হবে ৫০,০০০ টাকা।

সুতরাং, আপনি দেখতে পাচ্ছেন যে, পেঁয়াজের ভালো দাম পেলে আপনি কম বিনিয়োগের ভালো লাভ করতে পারেন।আপনি যদি পেঁয়াজ ব্যবসায় ভালো লাভ করতে চান, তাহলে আপনাকে অবশ্যই পেঁয়াজের বাজারের অবস্থা সম্পর্কে প্রথমত ভালো ধারণা রাখতে হবে। অন্যথায় আপনার ব্যবসায় প্রচুর পরিমাণে ক্ষতি হতে পারে।

এছাড়াও আপনাকে পেঁয়াজ সংরক্ষণের সঠিক পদ্ধতি জানতে হবে। পেঁয়াজের দাম যদি বাড়তি অবস্থায় তাকে, তাহলে অবশ্যই আপনি প্রচুর পরিমাণে লাভবান হবেন। কিন্তু আপনার সকল পরিস্থিতিতে খাপ খাইয়ে চলার মত শক্তি থাকতে হবে।

ব্যবসা শুরু করার উপকরণ

১) গুদাম বা দোকান

ইতিমধ্যেই বলা হয়েছে যে পেঁয়াজ ব্যবসা আপনাকে প্রথমে গুদাম বা বড় রুমে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে হবে। সেক্ষেত্রে যদি আপনার নিজস্ব জায়গা বা দোকান থাকে, তাহলে আপনার জন্য সুবিধা রয়েছে। অন্যথায় আপনি একটি গুদাম বা দোকান ভাড়া নিতে পারেন।

২) একজন কর্মচারী

এই ব্যবসা করার জন্য আপনার একজন সহকর্মী প্রয়োজন হবে। যিনি আপনাকে পেঁয়াজ বাছাই করতে সাহায্য করবেন। একজন সহকর্মী যে কোন ব্যবসায় থাকা ভালো। সহকর্মী ছাড়া ব্যবসায় আগানো সম্ভব নয়।

৩) মেশিন

পেঁয়াজ ব্যবসার জন্য আপনাকে পেয়াজ মাপার যন্ত্র কিনতে হবে। যার মাধ্যমে আপনি সঠিক পরিমাণে অর্জন করে পেঁয়াজ গ্রাহকদের দিতে পারেন।

৪) প্লাস্টিক বা পলিথিন

ব্যবসায়ের আপনার প্লাস্টিকের প্রয়োজন হবে। যাতে পেঁয়াজ সহজে নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা না থাকে। এবং পেয়াজ যাতে আপনি সহজেই নিরাপদ রাখতে পারেন।

পেঁয়াজ পাইকারি ব্যবসার জন্য কিভাবে কিনতে হবে

আপনি সহজে পেঁয়াজের পাইকারি ব্যবসা করতে চাইলে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে পেঁয়াজ কিনে আনতে হবে। আপনি এগুলি কম দামে কিনতে পারেন, যারা পেঁয়াজ চাষ করেন তাদের কাছ থেকে সরাসরি কিনে আনলে আপনি কম দামে পেঁয়াজ পাবেন। এবং আপনি চাইলে এই পেঁয়াজ গুলি অল্প লাভের জন্য খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করতে পারেন। এতে আপনারও যেমন সুবিধা বেশি কৃষকদেরও অনেক সুবিধা রয়েছে।

আপনি আপনার লাভের পাশাপাশি কৃষকদের অনেক সাহায্য করতে পারেন। কারণ কৃষকরা নিশ্চিত হতে পারেন যে তাদের চাষ করা পেয়াজ বিক্রি করতে কোথাও যেতে হবে না। আপনি আগে থেকেই তাদেরকে বলে রাখতে পারেন যে আমি আপনাদের কাছে এই পরিমাণ পেঁয়াজ কত টাকা দামে কিনে নিব।

পেঁয়াজের পাইকারি বাজার কোথায়

দেশের সবচেয়ে বড় পেঁয়াজের পাইকারি বাজার হচ্ছে খাতুনগঞ্জ। বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি বড় পাইকারি পেঁয়াজের বাজার রয়েছে, যেখানে পাইকারি দামে পেঁয়াজ কেনা-বেচা করা যায়। এখানে আপনি খুচরা ভাবে পেঁয়াজ আনতে পারবেন না আপনাকে একসাথে পেয়াজ আনতে হবে ব্যবসায়ীর জন্য। কিছু পাইকারি বাজার হলো:

  • খাতুনগঞ্জ, চট্টগ্রাম: খাতুনগুন হচ্ছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পেঁয়াজের পাইকারি বাজার।
  • চকবাজার, ঢাকা – এটি দেশের অন্যতম বৃহত্তম একটি পেঁয়াজের পাইকারি বাজার।
  • রাজশাহী পেঁয়াজের পাইকারি বাজার – রাজশাহী মূলত মসলার জন্য খুবই বিখ্যাত পাইকারি বাজার। তবে এখানে পেয়াজও পাইকারি দামে পাওয়া যায়। এখানে পেঁয়াজেরও পাইকারি বাজার রয়েছে।
  • সাতক্ষীরা এবং যশোরের পেঁয়াজের পাইকারি বাজার – স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি পেঁয়াজ কেনার সুযোগ রয়েছে।

 

পেঁয়াজের স্টক ব্যবসা থেকে লাভ

পেঁয়াজের পাইকারি ব্যবসা থেকে আপনার লাভ নির্ভর করবে কৃষকদের কাছ থেকে আপনি কি পরিমান পেঁয়াজ কিনছেন সেটির ওপর। পেঁয়াজ কতটা বিক্রি করতে পারবেন তা নির্ভর করে আপনার নির্দিষ্ট আয়ের উপর। এর জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল বাজারে আপনার ব্যবসার স্থিতিশীলতা বজায় রাখা।

ব্যবসা যে কোন পরিস্থিতিতে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন সেই দিকে অবশ্যই বেশি মনোযোগ দিতে হবে। কারণ পেঁয়াজের দাম কখনো বেশি আবার কখনো কমও হতে পারে। এই ক্ষেত্রে, আপনি যদি প্রচুর পরিমাণে পেঁয়াজ মজুদ করেন এবং যদি দাম বাড়তে থাকে তবে আপনি যদি সেই সময় বাজারে বিক্রি করেন তবে আপনার বেশি লাভ হবে।

পরিশেষে,আপনি খুব সহজ উপায়ে পেঁয়াজের ব্যবসা শুরু করতে পারেন। সঠিক ব্যবসায়ীর জ্ঞান রেখে আপনি যদি পেঁয়াজ ব্যবসায়ের কার্যক্রম চালু করেন তাহলে অবশ্যই আপনি সফল হবেন। আশা করছি আমাদের আজকের এই ব্যবসায়ী ধারণা আপনার পছন্দ হয়েছে। এই বিষয়ে আরো কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করে জানাবেন। 

Sharing Is Caring:

Leave a Comment