এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যবসা: কিভাবে শুরু করবেন এবং দ্রুত লাভবান হবেন?

বাংলাদেশের এক্সপোর্ট ইমপোর্ট খাত প্রচুর সম্ভাবনাময়। বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যবসাকে রাজকীয় ব্যবসা বলা হয়। এই লেখাটিতে এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যবসার বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যবসা কিভাবে করবেন এবং এই ব্যবসা শুরু করতে কি কি প্রয়োজন হবে সবকিছু সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।

এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যবসা বলতে বুঝানো হয় মালামাল আমদানি ও রপ্তানি করা। বর্তমান সময়ে অন্য সকল দেশের তুলনায় এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যবসায় বাংলাদেশ পিছিয়ে নেই। ব্যক্তি পর্যায়ে থেকে শুরু করে বাণিজ্যিক কোম্পানি হিসেবে অনেক প্রতিষ্ঠান এই এক্সপোর্ট ইমপোর্ট এর ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। 

বাংলাদেশের মানুষের চাহিদা অনেক বৃদ্ধি পাচ্ছে, যার ফলে বিভিন্ন দেশ থেকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি করা প্রয়োজন হয়। অপরদিকে বাংলাদেশে তৈরি অনেক পণ্য বিদেশে বেশ জনপ্রিয়। যেগুলো বিভিন্ন কোম্পানির মাধ্যমে বাহিরের দেশগুলোতে রপ্তানি করা হয়।

এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যবসা কি? 

এক্সপোর্ট বলতে বুঝানো হয় বাংলাদেশ থেকে কোন মাল বাহিরে তথা বিদেশে রপ্তানি করা। এবং ইনপুট বলতে বোঝানো হয় বিদেশ থেকে কোন মাল বাংলাদেশে আমদানি করা। মালামাল আমদানি ও রপ্তানির এই প্রক্রিয়াকে এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যবসা বলা হয়।

ইমপোর্ট এক্সপোর্ট এর ব্যবসা একটি আন্তর্জাতিক ব্যবসা। বর্তমানে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ফলে যে কেউ চাইলে এই ব্যবসা শুরু করতে পারে। তবে এই ব্যবসা শুরু করার জন্য একটি লাইসেন্স তৈরি করতে হবে অন্যথায় আপনার আমদানি রপ্তানি করা পণ্যগুলো অবৈধ বলে বিবেচিত হবে।

এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যবসার নিয়ম 

এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যবসা করার জন্য প্রথমে আপনাকে বাংলাদেশ মার্কেট সম্পর্কে ধারণা অর্জন করতে হবে, এবং আপনাকে নির্ধারণ করতে হবে আপনি কোন পণ্য নিয়ে এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যবসা করবেন। এবং ব্যবসা করার জন্য পর্যাপ্ত মূলধন রাখতে হবে।

এক্সপোর্ট ইমপোর্ট এর ব্যবসা শুরু করার আগে প্রথমে আপনাকে খোঁজ নিতে হবে আপনার নিকটস্থ এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যবসা করে সফল ব্যবসায়ী কারা। এবং তার কাছ থেকে সম্পূর্ণ প্রসেস সম্পর্কে জানতে হবে, এই ব্যবসায়ে কেমন লাভ হবে এবং কিভাবে এই ব্যবসা চালাতে হবে।

সাধারণত এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যবসা হল বাংলাদেশের মার্কেট থেকে পাইকারি রেটে কোম্পানির কাজ থেকে পণ্যগুলো ক্রয় করে বিদেশে বিক্রি করা এবং বিদেশ থেকে পাইকারি রেটে কোম্পানির কাছ থেকে প্রোডাক্ট ক্রয় করে বাংলাদেশে বিক্রি করা।

অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠান এই এক্সপোর্ট ইমপোর্ট এর ব্যবসা করে থাকে। যারা এই ধরনের ব্যবসা করে তাদের সাথে আপনার ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। এছাড়াও আলিবাবা এবং amazon এর মতো বড় মার্কেটপ্লেসগুলোতে সেলার হিসেবে এক্সপোর্ট এর ব্যবসা করতে পারেন।

এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যবসা করতে কি কি প্রয়োজন 

আপনার যদি এক্সপার্ট ও ইমপোর্ট এর ব্যবসা শুরু করতে চান তাহলে ব্যবসা শুরু করার পূর্বে কিছু জিনিস সংগ্রহ করে রাখতে হবে। অন্যতায় আপনারা সফলভাবে এই ব্যবসা শুরু করতে পারবেন না। 

১) ব্যবসা শুরু করার জন্য সঠিক পণ্য নির্বাচন করতে হবে। 

২) পণ্য আমদানি ও রপ্তানি করার জন্য একটি ট্রেড লাইসেন্স অবশ্যই প্রয়োজন। 

৩) সঠিক উপায়ে ব্যাংকিং কার্যাবলী সফল করতে হবে, ব্যবসার জন্য ব্যাংক একাউন্ট অবশ্যই প্রয়োজন।

৪) যোগাযোগের দক্ষতা বাড়াতে হবে। অল্প সময়ের মধ্যে বিদেশি কাস্টমারের সাথে কথা বলে কনভেন্স করার জন্য যোগাযোগ দক্ষতা বাড়াতে হবে। 

৫) যেহেতু আপনার এই ব্যবসা দেশ-বিদেশ অবস্থানে চলবে অবশ্যই আপনাকে ইন্টারন্যাশনাল বাসা অর্থাৎ ইংরেজি ভাষায় পারদর্শী হতে হবে। 

৬) এবং এই ব্যবসা করার জন্য আপনাকে একটি স্থান নির্ধারণ করতে হবে। যদি আপনারা জাহাজের মাধ্যমে মাল ইনপুট করতে চান তাহলে জাহাজ বন্দরের আশেপাশে একটি জায়গা নির্ধারণ করে আপনাদের অফিস স্থাপন করবেন। 

৭) এক্সপোর্ট ব্যবসা শুরু করার আগে আপনাকে বাংলাদেশ মার্কেট সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। 

৮) অন্য যাচাইয়ের পরে, বাংলাদেশ মার্কেট থেকে এই পণ্যটি আপনার কত টাকা ক্রয় করতে হবে এবং বিদেশি মার্কেটে এই পণ্যটি আপনি কত টাকা বিক্রয় করতে পারবেন, ঠিক একইভাবে বিদেশি মার্কেট থেকে একটি পণ্য কত দামে ক্রয় করতে পারবেন এবং কত দামে বিক্রি করতে পারবেন তা হিসাব করতে হবে।

৯) ব্যবসা শুরু করার পূর্বে অবশ্যই মূলধন গুছিয়ে রাখতে হবে। 

১০) সোশ্যাল কালেক্টিভিটির জন্য একটি অফিসিয়াল ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারেন। 

১১) এবং আপনাদের ব্যবসার প্রচারণার স্বার্থে অফিশিয়াল ফেসবুক একাউন্ট ও ইনস্টাগ্রাম একাউন্ট চালু করতে পারেন। 

এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যবসার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করতে গেলে অবশ্যই আপনাকে উপরের এই বিষয়গুলো নিশ্চিত করে ব্যবসা শুরু করতে হবে। এক্সপোর্ট ও ইমপোর্ট এর ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো যোগাযোগ নিশ্চিত করা।

আমদানি ও রপ্তানি ব্যবসা করার জন্য যোগাযোগ নিশ্চিত করুন 

আমদানি ও রপ্তানি ব্যবসা করার জন্য প্রথমে আপনাকে যেই দেশে ব্যবসা করতে চান সেখানে বড় কোন কোম্পানির সাথে যোগাযোগ নিশ্চিত করতে হবে। মনে করেন আপনি আমেরিকায় ব্যবসা করতে চাচ্ছেন সে ক্ষেত্রে আমেরিকার কোন কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

সাধারণত নতুন যারা আমদানি ও রপ্তানি বা ইমপোর্ট এক্সপোর্ট এর ব্যবসা করতে চান, তাদের ক্ষেত্রে সব থেকে বড় বাধা হচ্ছে যোগাযোগ। নতুন এই ব্যবসায় এসে যোগাযোগ স্থাপন করা খুবই কঠিন হয়ে পড়ে। তাই আপনারা প্রথমে কোন ইনপুট ও এক্সপোর্ট কোম্পানির পার্টনার হয়ে কাজ করতে পারেন। সেক্ষেত্রে আপনি আগে থেকে এই ব্যবসায়ের ধারণা পাবেন।

এক্সপোর্ট ইমপোর্ট লাইসেন্স করার নিয়ম 

এক্সপোর্ট ও ইম্পোর্ট ব্যবসা করার জন্য লাইসেন্স করতে হবে অবশ্যই। যেহেতু আপনারা এক দেশ থেকে অন্য দেশে পণ্য আনা নেয়া করবেন সেহেতু লাইসেন্স অবশ্যই প্রয়োজন হবে। এক্সপোর্ট ইমপোর্ট লাইসেন্স করার জন্য প্রথমে ট্রেজারি চালানোর মাধ্যমে ব্যাংকের টাকা জমা দিয়ে, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করে অনলাইনে আবেদন করতে পারেন, এরপরে আবেদন পত্র সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জমা দিয়ে সিলমোহরসহ আবেদনপত্র আপলোড করুন।

বাংলাদেশ আমদানি ও রপ্তানি প্রদান নিয়ন্ত্রকের দপ্তর এই লাইসেন্স বিতরণ করে থাকে। যদি আপনি সঠিকভাবে উপযুক্ত প্রমাণসহ আবেদনটির জমা করেন তাহলে উপরে উল্লেখিত দপ্তর আবেদনের প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে এই লাইসেন্স ইস্যু করে।

এক্সপোর্ট ট্রেডিং কোম্পানি (ইটিসি)

একটি রপ্তানি বাণিজ্য কোম্পানি  ETC হল একধনের আমদানি রপ্তানি ব্যবসা। যা এক দেশ থেকে অন্য দেশে পণ্য ও পরিষেবার রপ্তানির ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ। ETCs দেশীয় নির্মাতাদের সাথে কাজ করে যাতে তারা বিদেশি ক্রেতা খুঁজে পেতে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে তাদের পণ্য বিক্রয় করতে সহায়তা করে।

ক্রেতা এবং বিক্রেতাদের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী হিসাবে কাজ করার পাশাপাশি,ETCs প্রাসই রপ্তানি প্রক্রিয়ার সহজতর করার জন্য বাজার গবেষণা, অর্থায়ন এবং লজিস্টিক সহায়তার মত অন্যান্য পরিষেবা প্রদান করে। 

রপ্তানি ব্যবস্থাপনা কোম্পানি (EMC)

একটি রপ্তানি ব্যবস্থাপনা কোম্পানি (EMC) দেশীয় নির্মাতাদের তাদের পণ্য বিদেশি বাজারের রপ্তানি করতে সহায়তা করে।

EMCs নির্মাতাদের পক্ষে এজেন্ট হিসাবে কাজ করে এবং সমগ্র রপ্তানি প্রক্রিয়ার তদারকের জন্য দায়ী– বিপণন, বিতরণ, সরবরাহ এবং অর্থপ্রধান সংগ্রহ সহ। তারা সাধারণত কৃষি, ইলেকট্রনিক্স বা টেক্সটাইল এর মত বা একাধিক শিল্পে বিশেষজ্ঞ এবং সেই পণ্য গুলির আন্তর্জাতিক বাজার সম্পর্কে তাদের ব্যাপক জ্ঞান রয়েছে।

FAQs

এক্সপোর্ট ইমপোর্ট লাইসেন্স করতে কত টাকা লাগে? 

এক্সপোর্ট লাইসেন্স করতে সরকারি নির্ধারিত ফি ৭,০০০ টাকা। ইমপোর্ট লাইসেন্স করাতে সরকারি নির্ধারিত ফিড ছয়টি ক্যাটাগরিতে হয়ে থাকে। এটা নির্ধারণ করা হয় ইমপোর্ট এর মূল্য সীমার উপর ভিত্তি করে। 

৫ লক্ষ টাকা মূল্যসীমার জন্য ৫,০০০ টাকা ফি, ২৫ লক্ষ টাকা মূল্যসীমা জন্য ১০,০০০ টাকা ফি, ৫০ লক্ষ টাকা মূল্য সীমা হলে ১৮,০০০ টাকা ফি, এক কোটি টাকা মূল্য সীমা হলে ৩০,০০০ টাকা ফি, পাঁচ কোটি টাকা মূল্য সীমা হলে ৪৫,০০০ টাকা ফি, এবং পাঁচ কোটির ঊর্ধ্বে হলে ৬০,০০০ টাকা ফি।

আমদানি রপ্তানি ব্যবসা কি?

আমদানি ও রপ্তানি ব্যবসা হল বিদেশ থেকে বাংলাদেশের মাল আনা এবং বাংলাদেশ থেকে বিদেশে মাল পাঠানো। তোতা আমদানি বলতে বুঝানো হয় অন্য কোন দেশ থেকে বাংলাদেশে কোন পণ্য ক্রয় করে আনা অপরদিকে রপ্তানি বলতে বুঝানো হয় বাংলাদেশ থেকে কোন পণ্য বিদেশে বিক্রি করা।

আমদানি রপ্তানি ব্যবসা পরিকল্পনা কি?

একটি আমদানি রপ্তানি ব্যাবসাহিক পরিকল্পনা হলো একটি পেশাদার নথি, যা বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যে নিযুক্ত একটি ব্যবসার উদ্দেশ্য, কৌশল, পরিচালনাগত বিবরণ এবং আর্থিক অনুমানের রূপরেখা দেয়।

রপ্তানি কৌশল কি? 

একটি রপ্তানি কৌশল নির্ধারণ করে যে কোম্পানি কিভাবে একটি বিদেশী দেশে দেশে রপ্তানি করবে এবং কোন দেশে রপ্তানি করবে। এটি মূল্য নির্ধারণের কৌশল, কোন পণ্য বিক্রি করা হবে, কোন বাজারে বিক্রি করা হবে এবং কিভাবে পণ্য রপ্তানি করা হবে তা নির্ধারণ করা।

পরিশেষে

এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যবসা একটি চ্যালেঞ্জিং কিন্তু লাভজনক ব্যবসা। ধৈর্য, পরিশ্রম এবং সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে আপনি এই ব্যবসায়ে সফল হতে পারবেন ইনশাআল্লাহ। তাই সততা এবং সঠিক নিয়ম মেনে আপনিও চাইলে ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন নিশ্চিন্তে। আশা করছি আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটি পরে অবশ্যই উপকৃত হবেন, ধন্যবাদ।

Sharing Is Caring:

Leave a Comment