আপনি কি বিমানের টিকেট ব্যবসা করার নিয়ম সম্পর্কে তথ্য খুজতেছেন? তাহলে এই আর্টিকেলটি শুধু আপনার জন্য। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও বর্তমান সময়ে বিমানে গ্রাহক বা যাত্রী বেড়েই চলেছে। সুতরাং ব্যাপক চাহিদা পূর্ণ এই বিমানের টিকেট ব্যবসা অত্যন্ত লাভজনক এবং সম্ভাবনাময় ব্যবসা হতে পারে। তবে বিমানের টিকেট ব্যবসা করার জন্য আপনাকে বেশ কিছু বিষয় জানতে হবে এবং বুঝতে হবে।
তাই আজ আমি বিমানের টিকেট ব্যবসা করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব। পাশাপাশি ব্যবসা করার জন্য কি কি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে সে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করব। যাতে করে আপনি কোন প্রবলেমের মুখোমুখি না হন। এজন্য সমস্ত আর্টিকেলটি আপনাকে মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে।
বিমানের টিকেট ব্যবসা করার নিয়ম
আমাদের আর্টিকেলে আমরা বিমানের টিকেট ব্যবসা করার জন্য কি কি নিয়ম ফলো করতে হবে এ নিয়ে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরে আপনাদের ব্যবসার সহায়তা করব। প্রথমত বিমানের টিকেট ব্যবসা করতে হলে আপনার জন্য প্রয়োজনীয় সব বিষয় নিচে দেয়া হল।
১) লাইসেন্স ও অনুমতি
বিমানের টিকেট ব্যবসা করা যেহেতু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং মূল্যবান একটি কাজ। সুতরাং এই ব্যবসা করতে হলে আপনাকে খুব সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
যেমন প্রথমে আপনাকে আপনার দেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের থেকে একটি লাইসেন্স ও অনুমতি নিতে হবে। এবং তাদের দেওয়া বিধি নিষেধ গুলো খুব ভালোভাবে জেনে নিতে হবে।
২) অফিসের স্থান
আপনার বিমানে টিকেট ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য একটি নির্দিষ্ট অফিসের প্রয়োজন হবে। যে অফিসটিতে গ্রাহকরা আপনার সাথে বারবার দেখা করতে আসবে এবং বিমানের টিকেট বুকিং করতে আসবে।
সুতরাং আপনাকে বিমানের টিকেট ব্যবসার জন্য একটি উপযুক্ত অফিসের স্থান নির্বাচন করতে হবে। এক্ষেত্রে অফিসটি বিমানবন্দরের আশেপাশে হতে পারে আবার অন্য কোথাও হতে পারে। তবে গ্রাহকদের যাতায়াতের সুবিধা অনুযায়ী আপনাকে স্থানটি নির্বাচন করতে হবে।
৩) কম্পিউটার ও সফটওয়্যার
বর্তমান সময়ে যেহেতু আধুনিকতার যুগ। এজন্য বাস, ট্রেন এবং বিমানের টিকেট বুকিং করতে হয় অনলাইনের মাধ্যমে।
সুতরাং আপনার বিমানের টিকেট ব্যবসা করতে হলে একটি ভালো মানের কম্পিউটারের প্রয়োজন হবে যার মাধ্যমে আপনি গ্রাহকদের সাথে যোগাযোগ এবং তাদের টিকেট বুকিং করতে পারবেন। পাশাপাশি বিমানের টিকেট বুকিং করার জন্য নির্দিষ্ট একটি সফটওয়্যার এর প্রয়োজন হবে।
৪) ব্যাংক একাউন্ট
যেহেতু বিমানের টিকেটের মূল্য তুলনামূলক একটু বেশি হয়। এজন্য টিকেট মূল্য সরাসরি নগদ টাকা না নিয়ে বরং সবাই ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন করে থাকে। এজন্য আপনারও লেনদেন করার জন্য একটি নিজস্ব ব্যাংক একাউন্ট থাকতে হবে।
৫) বীমা
আপনার বিমানের টিকেট ব্যবসা গ্রাহকদের সুবিধার জন্য এবং আপনার অর্থকে সুরক্ষার জন্য একটি বীমা করতে পারেন।
বিমানের টিকেট ব্যবসা করার নিয়মের বিভিন্ন পদ্ধতি
এখন আমরা বিমানের টিকেট ব্যবসা করার বিভিন্ন পদ্ধতি এবং নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত তথ্য দিব।
১.জিএস বা এজেন্ট হিসেবে কাজ করা
আপনি কোন নির্দিষ্ট একটি বিমান সংস্থার সাথে মিলে তাদের জেনারেল সেল্ফ এজেন্ট (জিএস) বা তাদের এজেন্ট হিসেবে কাজ করতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনার কাজ হবে শুধুমাত্র তাদের বিমান টিকেট বিক্রি করা।
২.বিমান টিকেট এজেন্সি
বিমানের টিকেট বিক্রি ব্যবসার দ্বিতীয় আরো একটি পদ্ধতি হলো বিমান টিকেট এজেন্সি ট্রাভেল খোলা। এখানে আপনি শুধুমাত্র একটি বিমান সংস্থার টিকেট নয় বরং একাধিক বিমান সংস্থার টিকেট বিক্রি করতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে আপনাকে বিভিন্ন বিমান সংস্থার সাথে সরাসরি যোগাযোগ করে তাদের travel এজেন্সি ক্রয় করতে হবে।
৩) অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি
আধুনিকতার যুগে মানুষদের ব্যবসা থেকে শুরু করে কেনাকাটা এবং সবকিছুই অনলাইন ঘিরে গড়ে উঠেছে। সুতরাং আপনিও অনলাইনে একটি ট্রাভেল এজেন্সি হতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে আপনার একটি ফেসবুক পেজ অথবা একটি ওয়েবসাইট খুলতে হবে।
বিমানের টিকেট ব্যবসা করার বেশ কিছু সুবিধা
উচ্চ মুনাফা
বিমানের টিকেটের মূল্য যেহেতু পরিমাণে অনেক বেশি। সুতরাং তার থেকে মুনাফা লাভের পরিমাণটাও বেশি পাওয়া যায়।
চাহিদা সম্পন্ন ব্যবসা
বিমানের টিকেটের চাহিদা সারা বছর জুড়ে থাকে। আমাদের দেশ থেকে মানুষ বিভিন্ন কাজে যেমন অফিসিয়াল কাজে অথবা ভ্রমণে বা আরো অন্যান্য কাজে তারা প্রায় বিদেশ গমন করে থাকেন।
আমি তো তোমার বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত ট্রাভেল এজেন্সি
বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত ট্রাভেল এজেন্সিগুলি হল সেগুলি, যারা বৈধভাবে পর্যটন ও ভ্রমণ সম্পর্কিত বিভিন্ন সেবা প্রদান করে থাকে।
- জামান এয়ার ইন্টারন্যাশনাল
- সোহার্দ্য ট্রাভেলস
- গ্রীন লাইন ট্রাভেলস
- ওয়ার্ল্ড ট্যুরিজম এন্ড ট্রাভেলস
- বিমান ট্রাভেলস
- ইউনিক ওয়াল্ড ট্রাভেলস
- সাম ওয়ে ট্রাভেল এজেন্সি
- আকাশ ট্রাভেলস
- ইন্টারন্যাশনাল সার্ভিস লিমিটেড
এই সমস্ত কোম্পানির আমাদের দেশের নামকরা কোম্পানি। ব্যবসা করার জন্য এই কোম্পানিগুলোকে ফলো করতে পারেন।
বিমানের টিকেট কাটার অ্যাপস
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ( viman Bangladesh airlines)। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নিজস্ব অ্যাপ রয়েছে, যা ব্যবহার করে যাত্রীরা সরাসরি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট টিকেট বুক করতে পারেন। অ্যাপটি ব্যবহার করে টিকেট বুকিং, সময়সূচী চেক করা এবং অন্যান্য সেবা সহজে পাওয়া যায়।
Share Trip
Share Trip (শেয়ার ট্রিপ) এটি হচ্ছে বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় ট্রাভেল বুকিং অ্যাপ। এটি বিমান টিকেট, হোটেল বুকিং এবং ট্রাভেল প্যাকেজ বুক করতে সহায়ক।
Go Zayaan
Go Zayaan (গো যায়ান) একটি জনপ্রিয় স্থানীয় ট্রাভেল বুকিং অ্যাপ। যা বিমানের টিকেট, হোটেল বুকিং এবং ট্রাভেল ইন্সুরেন্সের সুবিধা দেয়।
Flight expert
Flight expert (ফ্লাইট এক্সপার্ট) একটি ট্রাভেল এজেন্সি এবং অ্যাপ। যা আন্তর্জাতিক এবং অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট এর জন্য টিকেট বুক করতে সহায়ক।
Tripmaker
Tripmaker (ট্রিপ মেকার) অ্যাপটি বাংলাদেশের ট্রাভেল বুকিং সেবার জন্য জনপ্রিয়। এটি বিমান টিকেট এবং হোটেল বুকিং এর সুবিধা দিয়ে থাকে।
Noboair
Novoair (নভোএয়ার) বাংলাদেশের একটি অভ্যন্তরীণ এয়ারলাইন এবং তাদের নিজস্ব একটি অ্যাপ রয়েছে। এই অ্যাপের মাধ্যমে যাত্রীরা তাদের ফ্লাইট বুক করতে পারেন, সময়সূচী দেখতে পারেন এবং অন্যান্য সেবা পেতে পারেন।
Us -Bangla Airlines
Us-Bangla Airlines ( ইউ এস বাংলা এয়ারলাইন্স) এটি হচ্ছে বাংলাদেশে অন্যতম একটি বৃহৎ বেসরকারি এয়ারলাইন। তাদের নিজস্ব অ্যাপ রয়েছে। যা ব্যবহার করে টিকেট বুকিং করা যায়।
উপরোক্ত সকল apps গুলো হচ্ছে অনলাইনের নামকরা এবং জনপ্রিয় অ্যাপস। আপনি ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে চাইলে এই অ্যাপসগুলো ফলো করতে পারেন।
কতটুকু লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা
লাভের হিসাবটা নির্ভর করছে আপনার দক্ষতার ওপর। বাজেট কম থাকলে একই টাকা মাসে একাধিকবার ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রাথমিক বিনিয়োগ সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে শুধু টিকেট বিক্রি করেই মাসে ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা আয় করা সম্ভব।
একই টাকা এক আতিক বার ব্যবহার করে ছোট টিকেট ব্যবসায়ীরা মাসের ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করে থাকেন। এ ছাড়া ট্যুর প্যাকেজ, হোটেল বুকিং, ভিসা প্রসেসিং, হজ ও উমরাসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কাজ করে আরো অনেক বেশি আয়ে করা সম্ভব।
পরিশেষে
উপরে বিমানের টিকেট ব্যবসা করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। যদি বিমান টিকেট ব্যবসার বিষয়গুলো আপনি ফলো করেন তাহলে খুব সহজেই সফলতা অর্জন করতে পারবেন। যদি আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। ধন্যবাদ।