ফার্মেসি ব্যবসা: কম বিনিয়োগে বেশি লাভ, সফলতার সিক্রেট জানুন!

বর্তমানে আমাদের বাংলাদেশের যে কয়েকটি লাভজনক ব্যবসা আইডিয়া রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম একটি ব্যবসা হচ্ছে ফার্মেসি ব্যবসা। এর কারণ হচ্ছে বাংলাদেশ একটি গণবসতিপূর্ণ দেশ এবং যেখানে মানুষ রয়েছে সেখানেই ফার্মেসি ব্যবসা আজীবন থাকবে। কারণ মানুষ নিয়মিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে থাকে। এবং অসুস্থ হলেই প্রয়োজন হয় ঔষধ সেবনের।

আর এই ঔষধ ক্রয় করার জন্য মানুষকে বিভিন্ন ফার্মেসি প্রতিষ্ঠানের নিকট যেতে হয়। তাই আপনি যদি একজন শিক্ষিত বেকার যুবক হয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে একটি ফার্মেসি কোর্স গ্রহণ করে নিজেকে এই সেক্টরে একজন দক্ষ ফার্মাসিস্ট হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন।

এবং একটি ফার্মেসি ব্যবসা দিয়ে সুন্দর ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে পারেন। তবে একটি ফার্মেসি ব্যবসা গড়ে তোলার পূর্বে আপনাকে অবশ্যই কিছু শর্ত পূরণ করার পরে এই ব্যবসায় পা দিতে হবে। তাই আজকের এই আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সাথে ফার্মেসি ব্যবসা কিভাবে শুরু করা যায়? একটি ফার্মেসি ব্যবসা করতে কি কি প্রয়োজন? ফার্মেসী ব্যবসা কিভাবে শেখা যায়? ইত্যাদি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

ফার্মেসি ব্যবসা কি

ফার্মেসি ব্যবসা বলতে এমন এক ধরনের ব্যবসাকে বুঝায় যেখানে একজন ফার্মাসিস্ট ডাক্তার প্রেসক্রিপশন দেখার মাধ্যমে ওষুধ রোগীদের কাছে বিক্রি করে থাকেন। এছাড়াও অনেক সময় একজন ফার্মাসিস্ট ডাক্তার বিভিন্ন ধরনের সাধারণ রোগের ঔষধ নিজে বিক্রি করে থাকেন। সাধারণত ফার্মেসির ডাক্তাররা বিভিন্ন ধরনের প্রফেশনাল ডাক্তারদের প্রেসক্রিপশন অনুসারে ঔষধ রোগীদের দিয়ে থাকে।

ফার্মেসি প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন ধরনের পাইকারি ঔষধ কোম্পানি থেকে ঔষধ গুলো ক্রয় করে থাকে। এবং পরবর্তীতে তা খুচরা ভুক্তাদের বা রোগীদের নিকট অধিক দামে বিক্রি করে লাভবান হয়ে থাকে।

ফার্মেসি ব্যবসা কেন করবেন?

এই প্রশ্নের উত্তরে অনেক ধরনের কথা বলা যেতে পারে। তবে সংক্ষেপে যদি বলি ওষুধের প্রচুর চাহিদার কারণে এই ব্যবসায় লোকসান হওয়ার সম্ভাবনা অন্যান্য ব্যবসার চেয়ে তুলনামূলক অনেক কম হয়ে থাকে। 

তাই নিজেকে যদি একজন দক্ষ ফার্মাসিস্ট হিসেবে গড়ে তোলা যায় সেক্ষেত্রে ফার্মেসী ব্যবসায় সফলতা অবশ্যই পাবেন। ফার্মেসি ব্যবসায় সফল হতে আপনার অবশ্যই এই ব্যবসার উপর পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

এই ধরনের ফার্মেসি ব্যবসায় শুরু করার পূর্বে আপনি অন্যান্য ফার্মেসী প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা বা internship নেওয়ার চেষ্টা করুন। তাহলে আপনি ফার্মেসি ব্যবসার বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবেন।

ফার্মেসি ব্যবসা কিভাবে শুরু করব

ফার্মেসি ব্যবসা অন্যান্য দেশের মতো আমাদের বাংলাদেশেও অত্যন্ত লাভজনক একটি ব্যবসা। এটি অন্যান্য ব্যবসার চেয়ে তুলনামূলক অনেকটা সহজ একটি ব্যবসা। এর কারণ হচ্ছে এই ব্যবসায় অন্যান্য ব্যবসার তুলনায় প্রতিযোগিতা কম।

এর প্রধান কারণ হচ্ছে এখানে মেধাশ্রম কাটিয়ে ব্যবসা করতে হয়। আমাদের বাঙালিরা এই ক্ষেত্রে সবসময় পিছিয়ে থাকে। বাঙালিরা স্বভাবতই মেধাশ্রম থেকে কায়িক শ্রম বেশি দিয়ে থাকে।

যার ফলে বিভিন্ন ধরনের মেধাশ্রম নির্ভর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বাঙ্গালীদের আগ্রহ কম লক্ষ্য করা যায়। তাই আপনি এই সুযোগে কাজে লাগিয়ে ফার্মেসি ব্যবসা গড়ে তুলতে পারেন। একটি ফার্মেসি ব্যবসা গড়ে তুলতে হলে আপনাকে ড্রাগ লাইসেন্স, ট্রেড লাইসেন্স, মেডিকেল সার্টিফিকেট, একটি ফার্মের জন্য দোকান, এবং সর্বোপরি মোটামুটি মানের মূলধন বিনিয়োগ করতে হবে।

ফার্মেসি ব্যবসা করতে কি দরকার

ফার্মেসি ব্যবসা করতে যা প্রয়োজন ইতিমধ্যে আপনি উপরের অংশে জানতে পেরেছেন। এরপরও আপনাদের সুবিধার্থে তার পয়েন্ট আকারে উল্লেখ করে দেওয়া হল। 

ফার্মেসি ব্যবসা শুরু করতে আপনার অবশ্যই একটি মেডিকেল সার্টিফিকেট দরকার হবে। এছাড়াও ফার্মেসি ব্যবসা শুরু করতে অবশ্যই একটি ড্রাগ লাইসেন্স থাকতে হবে। ফার্মেসি ব্যবসার নামে একটি ট্রেড লাইসেন্স তৈরি করে নিতে হবে। আর অবশ্যই এমন একটি স্থানে আপনাকে ফার্মেসি ব্যবসা গড়ে তুলতে হবে যেখানে মানুষের যাতায়াত ও হাসপাতাল রয়েছে। সর্বোপরি আপনার এই ফার্মেসি ব্যবসা করার জন্য মোটামুটি ভালো মানের একটি পুঁজি প্রয়োজন হবে।

অনলাইন ফার্মেসী ব্যবসা

আপনি যদি একটি অনলাইনের মাধ্যমে ফার্মেসি ব্যবসা করতে চান সেক্ষেত্রে আপনার অবশ্যই উপরুক্ত মেডিকেল সার্টিফিকেট ও ড্রাগ লাইসেন্স এবং অনলাইনে পণ্য বিক্রি করার জন্য আপনার সাইটটিকে নিবন্ধিত করতে হবে। 

ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে একটি ট্রেড লাইসেন্স করা, অনলাইনে ফার্মেসি ব্যবসা করার জন্য একটি প্রফেশনাল ওয়েবসাইট তৈরি করা এবং ওষুধের জন্য যথেষ্ট মূলধন বিনিয়োগ করতে হবে। 

ফার্মেসি কোর্স

চার বছরের মেয়াদী ডিপ্লোমা ফার্মেসি কোর্স করে আপনিও একটি নিজস্ব ফার্মেসি ব্যবসা গড়ে তুলতে পারবেন। ফার্মেসি ব্যবসা শুরু করতে যেমন: মেডিকেল লাইসেন্স, ড্রাগ লাইসেন্স, ট্রেড লাইসেন্স ইত্যাদি প্রয়োজন হয়, তার পাশাপাশি আপনার অবশ্যই ফার্মেসি সম্পর্কে ব্যাপক জ্ঞান থাকতে হবে। যার ফলে আপনাকে অবশ্যই একজন ফার্মাসিস্ট ডাক্তার হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে হবে। 

অন্যথায় আপনি এই ধরনের লাইসেন্স ও সার্টিফিকেট গুলো পাবেন না। তাই আপনার যদি পরিকল্পনা থাকে ফার্মেসি ব্যবসা গড়ে তোলা সে ক্ষেত্রে এখন থেকেই নিজেকে তৈরি করে রাখুন।

বাংলাদেশ ফার্মেসি কোর্স সাধারণত তিন ধরনের হয়ে। 

  1. ক্যাটাগরি ফার্মেসি কোর্স 
  2. ক্যাটাগরি ফার্মেসি কোর্স 
  3. ক্যাটাগরি ফার্মেসি কোর্স

অনেকের মধ্যে প্রশ্ন জাগতে পারে যে ফার্মেসি ব্যবসা করার জন্য আমি কোন ধরনের কোর্সটি গ্রহণ করব। সেক্ষেত্রে আপনি যদি পরিকল্পনা করে থাকেন আপনি একটি ফার্মেসি ব্যবসা গড়ে তুলতে চান তাহলে সি ক্যাটাগরি ফার্মেসি কোর্সটি আপনাকে করতে হবে।

ফার্মেসি দোকান ডেকোরেশন 

ডেকোরেশন মূলত করা হয় একটি দোকানকে আকর্ষণীয় করার জন্য। ফার্মেসী ব্যবসা করার ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই আপনার ফার্মেসির দোকানটি বা ব্যবসাটিকে গোছালোভাবে ডেকোরেশন করে সজ্জিত করতে হবে। 

আপনি আপনার ফার্মেসি দোকান থেকে বিভিন্ন ধরনের লাইটিং কাচের শোকেস, ডিসপ্লে , কয়েকটি ফার্মেসি রেক, কাউন্টার, ডয়ারসহ ইত্যাদি প্রয়োজনে জিনিসপত্র দিয়ে আপনার ফার্মেসির দোকানটির সাজিয়ে নিতে পারেন।

ফার্মেসি ব্যবসায় লাভ 

সকল ব্যবসায়িক কমবেশি ঝুঁকি থাকে। তবে ফার্মেসি ব্যবসার ঝুঁকি কম লাভ বেশি। আপনি সঠিক নিয়মে যদি ব্যবসাটি শুরু করতে এবং চালিয়ে যেতে পারেন তাহলে অবশ্যই আপনার বিপুল লাভ হবে। একটি ফার্মেসি ব্যবসায় কি পরিমান লাভ হবে বা এ ধরনের ফার্মেসি ব্যবসার লাভের পরিমাণ সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে থাকে  আপনার পুঁজি বিনিয়োগের উপর। 

আপনি আপনার ফার্মেসি বিজনেসে যত বেশি বুঝে বিনিয়োগ করতে পারবেন, তত বেশি লাভ করতে পারবেন।  তবে সাধারণত একটি ফার্মেসি ব্যবসায়ী হিসেবে আপনি যদি তিন থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা এর মত পুঁজি বিনিয়োগ করে থাকেন, সেক্ষেত্রে আপনি তার বিপরীতে অনায়াসে মাসিক ৫০ হাজার টাকার মত আয় করতে পারবেন।

কিছু প্রশ্নের উত্তর 

ফার্মেসি ব্যবসায় কত টাকা লাগে?

  • আপনার যদি ফার্মেসীতে কাজের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা না থাকে তাহলে ১ কোটি টাকা দিয়েও পারবেন না। আর যদি অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা থাকে তাহলে ২ লক্ষ টাকা দিয়েও শুরু করতে পারবেন। মিডিয়াম ধরনের হলে কম হলে ১০ লাখ টাকার কম হলে হবে না।

ফার্মেসি পড়তে কত বছর লাগে? 

  • ইউনাইটেড কিংডমের একটি ব্যাচেলর অফ ফার্মেসির ডিগ্রী সম্পন্ন হতে সাধারণত চার বছর সময় লাগে, যেখানে একটি মাস্টার অফ ফার্মেসি ডিগ্রির জন্য ৫ বছর সময় লাগে। 

বাংলাদেশ ফরমাসিস্টদের বেতন কত? 

  • সাধারণত একজন ফার্মা সিস্টার বেতন প্রতি মাসে ১০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। ডিপ্লোমা ফার্মাসিটি দের বেতন সাধারণত ১০ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। তারা সাধারণত খুচরা ঔষধের দোকানে বা হাসপাতালগুলোতে কাজ করে থাকে।

ফার্মাসিস্টের কাজ কি? 

  • ফার্মাসিস্টের কাজ হল প্রেসক্রিপশন পুনঃপরীক্ষন, ঔষধ তৈরি, রোগীকে বিতরণ এবং ওষুধের ব্যবহারবিধি ও সংরক্ষণ নিয়ে রোগীকে পরামর্শ প্রদান। 

ফার্মেসি দিতে কি লাগে

  • ফার্মেসি দিতে প্রথমত কিছু ডকুমেন্টর প্রয়োজন হয়। যেমন ফার্মাসিস্ট সনদ, ড্রাগ লাইসেন্স এবং ট্রেড লাইসেন্স। একটি ফার্মেসী দোকান থেকে এই তিনটি জিনিসের প্রয়োজন হয়।

পরিশেষে

আজকের আর্টিকেলে একটি ফার্মেসি ব্যবসা কিভাবে শুরু করা যায়? ফার্মেসি ব্যবসা শুরু করতে কি কি কাগজপত্র ও লাইসেন্সের প্রয়োজন হয়? একটি ফার্মেসি ব্যবসা শুরু করতে কি পরিমান মূলধন ও পূজিব বিনিয়োগ করা দরকার হয়? ফার্মেসি কোর্স করার নিয়ম সমূহ সহ ইত্যাদি বিস্তারিত আপনাদের সাথে আলোচনা করার চেষ্টা করা হয়েছে।

আশা করছি আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটি আপনাদের পছন্দ হয়েছে। ধন্যবাদ।

Sharing Is Caring:

Leave a Comment