রক্ত দিলে রোজা ভেঙে যায় এটি একটি ভুল এবং ভ্রান্ত ধারণা ৷ ইসলামি বিধান অনুযায়ী, রোজা থাকা অবস্থায় শরীর থেকে রক্ত বের করলে রোজা ভাঙে না, কারণ এতে কোনো খাদ্য বা পানীয় শরীরে প্রবেশ করছে না।
আমরা জানি, স্বাভাবিক প্রবেশপথ দিয়ে যদি কোনো খাবার বা পানীয় পেটে বা মস্তিষ্কে প্রবেশ করে, তাহলে রোজা ভেঙে যায়। কিন্তু শরীর থেকে রক্ত বের হলে রোজার ওপর কোনো প্রভাব পড়ে না। দুর্ঘটনায় রক্তক্ষরণ হলে বা হাত-পা কেটে গেলে রোজা ভঙ্গ হয় না। বরং শুধু অজু ভঙ্গ হয়। তাই রক্তদানের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য।
রক্তদানের পর সাধারণত ৩০ মিনিটের মতো বিশ্রাম নেওয়া প্রয়োজন। এতে মাথা ঘোরা বা শরীর ঝিমঝিম করার মতো সমস্যা এড়ানো যায়। রোজা রেখে রক্ত দিলে ভারী শারীরিক পরিশ্রম, সাইকেল চালানো বা অধিক উচ্চতায় কাজ করার মতো বিষয়গুলো ২-৪ ঘণ্টা এড়িয়ে চলা উচিত। এছাড়া, রক্তদানের পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অতিরিক্ত পরিমাণে তরল পানিয় গ্রহণ করা জরুরি, যেমন ডাবের পানি, ফলের রস, খাওয়ার স্যালাইন এবং স্বাভাবিক পানি। এ সময় স্বাভাবিকের তুলনায় ২-৩ লিটার বেশি পানি পান করলে শরীরে রক্তের স্বাভাবিক ভলিউম বজায় থাকে।
রক্তদানের জন্য মানসিক ও শারীরিকভাবে সুস্থ থাকা জরুরি। আগের রাতে পর্যাপ্ত ৬-৮ ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করা উচিত, কারণ ঘুম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। তবে কেউ যদি মনে করেন, রক্ত দিলে তাঁর শরীর দুর্বল হয়ে পড়বে বা রোজা রাখার শক্তি হারিয়ে ফেলবেন, তাহলে তাঁর জন্য ইফতারের পর রক্ত দেওয়া উত্তম। একজন সুস্থ ব্যক্তির শরীরে সাধারণত ১ থেকে ১.৫ লিটার অতিরিক্ত রক্ত থাকে, তাই স্বাভাবিক পরিমাণ রক্তদান শরীরের কোনো ক্ষতি করে না। রক্তদানের পর শরীরে পানির ভারসাম্য বজায় রাখতে হলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৩-৪ লিটার পানি পান করাই উত্তম।
রোজার মতো বরকতময় সময়ে রক্তদান করলে অনেক বেশি সাওয়াব পাওয়া যায় ৷ রক্তদান একটি মহৎ কাজও বটে । সচেতনতার সঙ্গে রক্তদান করলে একজন রোজাদার তার ইবাদতের পাশাপাশি মানবসেবার অংশও হয়ে উঠতে পারেন।