যেসব কারণে রোজা ভঙ্গ হয় না – জানুন সাধারণ ভুল ধারণাগুলো!

রমজান মাস মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি মাস। পবিত্র এই মাসে মুসলমানরা সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও ইন্দ্রিয় তৃপ্তি থেকে বিরত থাকে, যা রোজার মূল শর্ত। তবে অনেক সময় কিছু কাজ নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা দেয়। যে এগুলো করলে রোজা ভঙ্গ হবে কি না। আজ আমরা এমন কিছু বিষয়ের বিস্তারিত আলোচনা করব, যেগুলো করলে রোজা ভঙ্গ হয় না।

১. ভুলবশত খাওয়া বা পান করা।

ইসলামে দয়া ও ক্ষমার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। যদি কেউ ভুলবশত কিছু খেয়ে ফেলে বা পানি পান করে, তাহলে তার রোজা ভঙ্গ হবে না। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:

যদি কোনো রোজাদার ভুলে কিছু খেয়ে ফেলে বা পান করে, তবে সে যেন রোজা পূর্ণ করে। কেননা, একমাত্র আল্লাহই তাকে আহার করিয়েছেন ও পান করিয়েছেন।” (বুখারি ও মুসলিম)

তবে মনে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই খাওয়া বন্ধ করতে হবে এবং রোজা চালিয়ে যেতে হবে।

২. কুলি করা বা নাকে পানি দেওয়া

ওযু বা গোসলের সময় কুলি করা এবং নাকে পানি দেওয়া সুন্নত তবে পানির কণা গলায় চলে গেলে রোজা ভঙ্গ হতে পারে। তাই রোজা অবস্থায় কুলি করার সময় খুব সাবধান থাকা উচিত।

৩. অনিচ্ছাকৃত বমি করা।

যদি কেউ নিজে থেকে বমি না করে, বরং অসুস্থতার কারণে স্বাভাবিকভাবে বমি হয়, তাহলে তার রোজা ভঙ্গ হবে না তবে যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে আঙুল দিয়ে বা অন্য কোনো উপায়ে বমি করায়, তাহলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে।

৪. মিসওয়াক বা টুথব্রাশ ব্যবহার করা।

রোজার সময় মিসওয়াক করা সুন্নত তবে কেউ যদি টুথব্রাশ ব্যবহার করে, তাতে সমস্যা নেই। কিন্তু টুথপেস্ট বা অন্য কোনো পদার্থ গলায় চলে গেলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। তাই সাবধান থাকা উচিত।

৫. রক্ত দেওয়া বা নেওয়া। 

কোনো রোজাদার যদি ব্লাড টেস্টের জন্য সামান্য রক্ত দেয় বা নেয়, তাহলে রোজা ভঙ্গ হবে না তবে শরীর থেকে অতিরিক্ত রক্ত বের হলে দুর্বলতা আসতে পারে, যা রোজার কার্যক্ষমতা প্রভাবিত করতে পারে।

৬. ইনজেকশন বা ইনহেলার ব্যবহার। 

যেসব ইনজেকশন পুষ্টির কাজ করে না (যেমন ব্যথানাশক বা ইনসুলিন ইনজেকশন), সেগুলো নিলে রোজা ভঙ্গ হয় না। তবে ইনহেলার ব্যবহারের বিষয়ে ভিন্ন মত রয়েছে, কারণ এটি সরাসরি ফুসফুসে যায়। তাই সম্ভব হলে বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

৭. রাতের সহবাসের পর ফজরের আগে গোসল করতে না পারা। 

যদি কেউ রাতে সহবাস করে এবং ফজরের আগে গোসল করতে না পারে, তাহলে গোসল করে ফজরের নামাজ আদায় করতে হবে। কিন্তু এতে তার রোজা ভঙ্গ হবে না।

৮. চোখে বা কানে ওষুধ ব্যবহার করা।

চোখে ড্রপ বা কাজল ব্যবহার করলে রোজা ভঙ্গ হয় না, কারণ এটি চোখের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে কিন্তু কানে ড্রপ দিলে কিছু ইসলামিক বিশেষজ্ঞের মতে রোজা ভঙ্গ হতে পারে, বিশেষ করে যদি তা গলার ভেতর চলে যায়।

৯. স্বপ্নদোষ হওয়া।

রোজার সময় ঘুমের মধ্যে স্বপ্নদোষ হলে রোজা ভঙ্গ হয় না  তবে এরপর পবিত্রতার জন্য গোসল করা ফরজ।

শেষ কথা

রোজা শুধুমাত্র খাওয়া-দাওয়া থেকে বিরত থাকার নাম নয়; এটি আত্মশুদ্ধির একটি পবিত্র  মাধ্যম। অনেক মানুষ ভুল ধারণার কারণে অপ্রয়োজনীয়ভাবে রোজা ভেঙে ফেলে। তাই সঠিক জ্ঞান থাকা জরুরি। ইসলাম সহজ এবং বাস্তবসম্মত ধর্ম, যেখানে মানুষকে অযথা কষ্ট দেওয়া হয় না। আল্লাহ আমাদের সঠিক পথে পরিচালিত করুন এবং আমাদের রোজাগুলো কবুল করুন, আমিন!

Sharing Is Caring:

Leave a Comment