ইসলাম ধর্মে নামাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত। ফরজ নামাজের পাশাপাশি অনেক সুন্নত ও নফল নামাজ রয়েছে, যা মুসলমানদের ইবাদতের প্রতি আগ্রহী করে তোলে। তারাবির নামাজ রমজান মাসে বিশেষভাবে পড়া হয় এবং এটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত ইবাদত হিসেবে গণ্য করা হয়। অনেক মুসলমান এই নামাজ আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের চেষ্টা করেন। তবে অনেকের মনে প্রশ্ন থাকে, তারাবির নামাজের হুকুম কি? এটি কি বাধ্যতামূলক নাকি সুন্নত? এই প্রবন্ধে আমরা তারাবির নামাজের হুকুম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
তারাবির নামাজের গুরুত্ব
তারাবি নামাজ হলো রমজান মাসের বিশেষ তারাবির নামাজ, যা এশার নামাজের পর ৮ বা ২০ রাকাত আদায় করা হয়। এটি মূলত জামাতে পড়া হয়ে থাকে এবং হাদিস অনুযায়ী মহানবী (সা.) এটি পড়েছেন এবং সাহাবাদেরও পড়তে উৎসাহিত করেছেন। এই নামাজের মাধ্যমে মুসলমানরা কুরআন তিলাওয়াত শোনার সুযোগ পান এবং রমজান মাসের বরকত লাভ করতে পারেন।
তারাবির নামাজের হুকুম
তারাবির নামাজের হুকুম কি? তারাবির নামাজের হুকুম সম্পর্কে ইসলামের বিভিন্ন মাজহাবের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। তবে সাধারণভাবে বলা হয় যে, এটি সুন্নতে মুয়াক্কাদা, অর্থাৎ এমন একটি সুন্নত যা মহানবী (সা.) নিয়মিতভাবে পালন করেছেন এবং উম্মতকে তা অনুসরণ করতে উৎসাহিত করেছেন।
১. সুন্নতে মুয়াক্কাদা
হানাফি, শাফেয়ী এবং হাম্বলি মাজহাব অনুসারে, তারাবির নামাজ সুন্নতে মুয়াক্কাদা। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত, যা নিয়মিত আদায় করা উচিত। কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে তা না পড়লে গুনাহগার হবেন না, তবে এটি ত্যাগ করা ইসলামের সুন্নত পরিপন্থী।
২. জামাতে পড়া উত্তম
যদিও ব্যক্তিগতভাবে তারাবি পড়া বৈধ, তবে জামাতে পড়া উত্তম এবং অধিক সওয়াবের কাজ। সাহাবারা জামাতে তারাবি নামাজ আদায় করতেন এবং খলিফা উমর (রা.) এর সময় এটি জামাতে পড়ার প্রচলন স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়।
তারাবির নামাজের ফজিলত
১. গুনাহ মাফ হওয়ার সুযোগ: হাদিসে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি ঈমান ও সওয়াবের আশায় তারাবির নামাজ আদায় করবে, তার অতীতের গুনাহ মাফ হয়ে যাবে (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)।
২. রাতের নামাজের ফজিলত: তারাবি মূলত তাহাজ্জুদ নামাজের অন্তর্ভুক্ত, যা কিয়ামুল লাইল নামে পরিচিত। এটি আল্লাহর নৈকট্য লাভের উত্তম মাধ্যম।
৩. কোরআন শ্রবণের সুযোগ: তারাবির নামাজে সাধারণত পুরো রমজান মাসে কোরআন খতম করা হয়, যা সওয়াব ও বরকতের কারণ।
৪. স্বাস্থ্য উপকারিতা: দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ার ফলে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে এবং এটি দেহের ব্যায়ামের মতো কাজ করে।
৫. জান্নাতের পথে চলার সুযোগ: যারা নিয়মিত তারাবির নামাজ আদায় করেন, তারা জান্নাত লাভের বিশেষ সৌভাগ্য অর্জন করতে পারেন।
৬. রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের সময়: রমজানের প্রথম ১০ দিন রহমতের, দ্বিতীয় ১০ দিন মাগফিরাতের এবং শেষ ১০ দিন জাহান্নাম থেকে মুক্তির সময়, তাই তারাবি এই বরকতময় সময়ের ইবাদত।
তারাবির নামাজ পড়ার নিয়ম
১. এশার ফরজ ও সুন্নত নামাজ শেষ করে তারাবির নামাজ শুরু করতে হয়।
২. দুই রাকাত করে সালাম ফিরিয়ে পড়তে হয়।
৩. কুরআন থেকে বড় বড় সূরা বা আয়াত তিলাওয়াত করা উত্তম।
৪. প্রতি চার রাকাত শেষে একটু বিশ্রাম নেওয়া যায়।
৫. শেষে বিতির নামাজ পড়া সুন্নত।
উপসংহার
তারাবির নামাজ ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত ইবাদত। এটি মুসলমানদের আত্মশুদ্ধি ও তাকওয়া অর্জনে সহায়তা করে এবং রমজানের বরকতকে আরও বাড়িয়ে তোলে। যদিও এটি ফরজ নয়, তবে সুন্নতে মুয়াক্কাদা হওয়ার কারণে নিয়মিত আদায় করা উচিত। জামাতে পড়লে সওয়াব আরও বেশি হয়। তাই প্রতিটি মুসলমানের উচিত তারাবির নামাজের গুরুত্ব অনুধাবন করে তা আন্তরিকতার সাথে আদায় করা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তারাবির নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।