ইসলাম ধর্মে নামাজ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করা হয়েছে, যা মুসলমানদের জন্য বাধ্যতামূলক। তবে তারাবির নামাজ রমজান মাসের একটি বিশেষ ইবাদত, যা রাতের সময় আদায় করা হয়। অনেক মুসলমানের মনে প্রশ্ন জাগে—তারাবির নামাজ না পড়লে কি গুনাহ হবে? এ বিষয়ে ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিভঙ্গি ও ধর্মীয় বিধান কী, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
তারাবির নামাজের গুরুত্ব
তারাবির নামাজ হলো রমজান মাসের বিশেষ একটি সুন্নত নামাজ। এটি সাধারণত এশার নামাজের পর জামাতে আদায় করা হয় এবং ২০ রাকাত হয়ে থাকে। তবে অনেকে ৮ রাকাতও আদায় করে থাকেন। মহানবী (সাঃ) নিজেও তারাবির নামাজ আদায় করেছেন এবং সাহাবাদেরও এটি আদায়ের প্রতি উৎসাহিত করেছেন।
তারাবির নামাজের বিধান
ইসলামী ফিকহ মতে, তারাবির নামাজ সুন্নতে মুআক্কাদা, অর্থাৎ এটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। এটি আদায় করা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ এবং মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের একটি বড় সুযোগ। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন:
“যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সওয়াবের আশায় রমজান মাসের রাতে (তারাবি) নামাজ আদায় করবে, তার অতীতের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।” (সহিহ বুখারি: ২০০৮, সহিহ মুসলিম: ৭৬০)
তারাবির নামাজ না পড়লে কি গুনাহ হবে?
যেহেতু তারাবির নামাজ ফরজ নয়, তাই এটি না পড়লে গুনাহ হবে না। তবে এটি সুন্নতে মুআক্কাদা হওয়ায় যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে ও অবহেলার কারণে এর প্রতি উদাসীন থাকে, তাহলে আলেমদের মতে, এটি ইসলামী চেতনার অভাব নির্দেশ করে। তাই নিয়মিত তারাবি আদায় করা একজন মুসলমানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এশার নামাজ আদায়ের পর অনেকেই মনে করেন, তারাবির নামাজ পড়া বাধ্যতামূলক নয়। তবে প্রকৃতপক্ষে, এটি সুন্নতে মুআক্কাদা। কোনো বৈধ কারণ ছাড়া এটি বাদ দেওয়া গুনাহের কাজ, এবং নিয়মিত না পড়লে তা গুরুতর গুনাহ হয়ে যেতে পারে। (রদ্দুল মুহতার ২/৪৯৫)
তারাবির নামাজ জামাতে পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদায়ে কিফায়া। কেউ যদি পরে জামাতে যোগ দেন এবং কিছু রাকাত বাকি থাকে, তাহলে তিনি ইমামের সঙ্গে বিতর নামাজ আদায় করে পরে বাকি রাকাত পড়ে নেবেন।
বেশ কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেদের ইমাম হিসেবে দাঁড় করানো হয়, যা সঠিক নয়। ইমাম হতে হলে বালেগ হওয়া জরুরি। এছাড়া, যারা তারাবি পড়ান, তাদের কাছ থেকে আয়াতের অর্থ বা সারসংক্ষেপ জানা উত্তম। সাহাবায়ে কেরাম যখন থেকে এই নামাজ পড়া শুরু করেন, তখন তারা প্রতি চার রাকাত পর সামান্য বিশ্রাম নিতেন। এ কারণেই এটি তারাবি নামাজ নামে পরিচিত। (ফতহুল বারী)
উপসংহার
তারাবির নামাজ ফরজ নয়, তবে এটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। এটি আদায় করলে অসংখ্য সওয়াব পাওয়া যায় এবং আল্লাহর রহমত লাভ করা সম্ভব। যদিও না পড়লে গুনাহ হবে না, তবুও ইচ্ছাকৃতভাবে এটি বাদ দেওয়া উচিত নয়। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তারাবির নামাজ নিয়মিত আদায়ের তাওফিক দান করুন। আমিন।